মুক্তমন ডেস্ক: বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনসমূহ ঢাকা চেম্বারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হবে।’
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) প্রথমবারের মতো আয়োজিত তিনদিনব্যাপী অনলাইন ভিত্তিক ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ-২০২১’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ডিসিসিআই’র এ উদ্যোগ বৈশিক ব্যবসায়িক সমাজে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের কর্মস্পৃহা ও উদ্যোম এর বহিপ্রকাশ এবং এ ধরনের উদ্যোগ দেশের অর্থনীতির উত্তরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যেও আমাদের পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল ছিল এবং বর্তমান সরকার দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা মধ্যে সমন্বয়ের সর্বাতœক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তিনি জানান, দেশের উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সরকার গৃহীত পণোদনা প্যাকেজের যথাযথ বাস্তবায়ানের মাধ্যমে মহামারী সময়কালেও দেশের অর্থনীতি কাঙ্খিত মাত্রায় সচল ছিল এবং বর্তমানে দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সরকারের নিকট সবচেয়ে বেশি প্রধান্যের বিষয়। মন্ত্রী জানান, আগামী মাসের মধ্যে এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণের সম্ভাবনা রয়েছে এবং সার্ক ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ আকর্ষনীয় গন্তব্যস্থল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ‘ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি’ নীতি গ্রহণ করেছে, যেখানে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বৈশি^কবাজারে দেশিয় উদ্যোক্তাদের অভিগম্যতা বৃদ্ধি, দেশীয় পণ্যের রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষন এবং তথ্য-প্রযুক্তির আদান-প্রদান বাড়ানো প্রভৃতি বিষয় প্রাধান্য পাবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ‘উৎপাদনশীল শিল্পের বৈশি^ক কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে গড়ে তোলতে চায়। তিনি জানান, শিল্প খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে কার্যকর আন্তঃযোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে বলে বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে এবং এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সম্প্রসারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ে একটি নতুন শাখা স্থাপন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এ ধরনের কার্যক্রমে সর্বাকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনসমূহ ঢাকা চেম্বারকে সর্বাতকে সহযোগিতা প্রদান করবে।
এ অনলাইন কনক্লেভের আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বৈশিক অর্থনীতিতে বিদ্যমান পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশও শিল্পখাতে পণ্য উৎপাদন ও সেবা প্রদানের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে নানাবিধ উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে। তিনি ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২১’-এ অংশগ্রহণকারী বিদেশী উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আজকের এ আয়োজন অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করবে এবং একই সাথে দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে বহুগুনে বৃদ্ধি করবে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২১’-এ বাংলাদেশ সহ ১০টি দেশের ২২৭টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাবৃন্দ ১৭৬টি বিটুবি ম্যাচ-মেকিং-এ অংশগ্রহণ করবে, যেখানে এ্যাপারেল ও টেক্সটাইল, হালকা প্রকৌশল, ঔষধ, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষি ও খাদ্য পক্রিয়াজাতকরণ এবং তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক সেবা প্রভৃতি খাত প্রাধান্য পাবে।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে বিডা-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনা মাহামারীতে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে, যেখানে স্থানীয় বাজারে চাহিদা ও রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহও বেড়েছে। তিনি জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনা পরিস্থিতিতেও দেশের রপ্তানির পরিমান ছিল ৩৩.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিডা’র চেয়ারম্যান বলেন, ২০২১ সালে স্বল্পন্নোত দেশ হতে উত্তরণের মানদ- বিচারের যে প্রক্রিয়া রয়েছে, তাতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে।