এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : অবশেষে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বহুল আলোচিত বিসিক শিল্পনগরী। শুরুতে প্রকল্পটি মুখ ধুবড়ে পড়লেও একের পর এক বাধা পেরিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। কয়েক দফায় প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা বাড়িয়েও যথা সময়ে আলোরমুখ না দেখায় স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছিল অসন্তোষ। কিন্তু অবশেষে প্লট বরাদ্দ ও পরীক্ষামূলক উৎপাদনের মধ্য দিয়ে আলোর মুখ দেখতে শুরু করলো দেশের ৭৫তম বিসিক শিল্পনগরী। সব কয়টি কারখানা চালু হলে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে প্রায় ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ১৫ দশমিক ৩২ একর জমির উপর নির্মিত মিরসরাই বিসিক শিল্প নগরীতে ব্যয় হয় ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। কাজ শেষ হওয়ার ২ বছর পর বরাদ্দের জন্য ৮৮টি প্লটের বিপরীতে ১১৪টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। যাচাই বাছাই শেষে ৮৮টি শিল্পোদ্যোক্তাকে প্লট বরাদ্দ দেয় বিসিক চট্টগ্রাম জেলা প্লট বরাদ্দ কমিটি। কিন্তু সময় মতো প্লটের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ১৪টি প্লটের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। প্লটের প্রতি বর্গফুট জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০০ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এই শিল্পনগরীকে ঘিরে শিল্পোদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেশি দেখা দিয়েছে। তবে চট্টগ্রাম জেলা প্লট বরাদ্দ কমিটি অনেক যাচাই বাছাই করে প্লট বরাদ্দ দিচ্ছেন। বাতিল হওয়া প্লট বরাদ্দে শীঘ্রই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হবে বলে জানান বিসিক চট্টগ্রামের উপ-ব্যবস্থাপক আহম্মেদ জামাল নাসের চৌধুরী।
বিসিক সূত্রে আরো জানা গেছে, মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে এ-টাইপ প্লট-২৭টি, বি-টাইপ প্লট-৩৩টি ও সি-টাইপ প্লট-২৭টি। প্লট বরাদ্দ কমিটি প্রকৌশলি খাতে ১৯টি, তৈরি পোশাক খাতে ১৬টি, খাদ্য ও খাদ্যজাত খাতে-১৯টি, ক্যামিকেল এন্ড অ্যালাইড খাতে ১০টি, বন ও বনজাত খাতে ৩টি, প্যাকেজিং খাতে ৮টি, সিরামিকস ও নন মেটালিক-৩টি, রাবার-লেদার এন্ড অ্যালাইড খাতে-৪টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে পণ্য উৎপাদনের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীকে। প্লট গ্রহীতা চাইলে এখনি বিদ্যুৎ সংযোগসহ সব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী ঘুরে দেখা গেছে, ৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল প্রোডাক্টসন) উৎপাদনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: নাছির ক্যামিকেল, মাওলানা জলিল প্যাকেজিং ও খাজা ভান্ডার অটো রাইস মিল। তিন মাস ট্রায়ালের পর বিএসটিআইয়ে অনুমোদন নিয়ে বাজারজাতকরণের জন্য উৎপাদনের যেতে পারবে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া আরো কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান কারখানা নির্মাণ কাজ শুরু করেছে।
এবিষয়ে নাছির ক্যামিকেলে পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, ২০১৯ সালের শেষে দিকে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে সাড়ে ১১ শতাংশ জমি বরাদ্দ পাই আমরা। কারখানা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবো আমরা। প্রাথমিক পর্যায়ে ট্রান্সফরমার রিসাইক্যালিং ও গিরিজ তৈরি করা হবে। পরে মোবিল উৎপাদন করা হবে। কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে ৬ জন মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
এবিষয়ে বিসিক চট্টগ্রামের উপ-ব্যবস্থাপক আহম্মেদ জামাল নাসের চৌধুরী জানান, মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে ৮৮টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হলেও শর্ত অনুযায়ী জমির কিস্তি পরিশোধ না করায় ১৪টি শিল্পদ্যোক্তার প্লট বাতিল করা হয়েছে। শীঘ্রই পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৪টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শীঘ্রই ৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে।
উল্লেখ্যঃ ২০০৯ সালে মিরসরাইয়ে একটি বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১০ সালে মিরসরাইয়ের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাধিকবার প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা বাড়ানো হয়। ২০১৫ সালের ১২ মে জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প আকারে ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার মিরসরাই বিসিক প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।