পুরুষের জন্য লাল রংয়ের কাপড় পরিধান হারাম কেন?
প্রশ্নটি আমাকেও অনেক ভাবিয়েছে কিন্তু শুধুমাত্র "কোরআন ও হাদিসে আছে"- বলেই কোন কিছু আমি মেনে চলবো আমার মনোভাব এমন নয়। আমার মনোভাব হলো এমন যে- কোরআন ও হাদিস নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করবো এবং মেনে চলবো কিন্তু কোরআন/ হাদিসে কোন একটি বিষয়/বস্তুকে কেন হারাম/হালাল করা হয়েছে তার কারণটাও জানতে হবে!
কেননা- কুরআন ও হাদিস শুধু পড়ার জন্য নয় বরং পড়ে বুঝা, আমল করা, মেনে চলা, কায়েম করা এবং বর্ণিত বিষয় বস্তু নিয়ে গবেষণা করার জন্য। আল্লাহ বলেন-
‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে,রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনে,যা মানুষের হিত সাধন করে,তা সহ সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহে,আল্লাহ্ আকাশ থেকে যে বারি বর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং তার মধ্যে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তারণে,বায়ুর দিক পরিবর্তনে,আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ সূরা বাকারা, আয়াত-১৬৪
যাই হোক- এবার আমি আমার ভাবনা প্রকাশ করি যে- লাল রংয়ের পোশাক পরিধান কে পুরুষের জন্য কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে?
একটু অন্য প্রসঙ্গ থেকে শুরু করি-
পুরুষের জন্য আপন- বোন খালা ফুফু ভাতিজি ভাগিনি (ইত্যাদি) মহিলাদের বিয়ে করতে নিষেধ/হারাম করেছেন কেন?- এগুলোর ক্ষেত্রে নৈতিক বিবেচনার বাইরেও আরেকটি বিষয় আছে সেটা হলো জেনেটিক সাইন্স এবং হিউম্যান বায়োলজি!
এসব আত্মীয় মহিলার সাথে কোন না কোন ভাবে ঐ পুরুষের রক্তের বন্ধন থাকে। সেটা চাচাতো বোনের সাথেও থাকে। কিন্তু ঐ সকল রক্তের সাথে যদি তার রক্তের মিলনের ফলে (বিবাহের মাধ্যমে) কোন সন্তান জন্ম নেয় তাহলে তারা কিছু জটিল রোগ নিয়ে জন্মায়- এটা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণীত। এই বিষয়টি পৃথিবীর সকল সভ্য সমাজে লক্ষ্য করা যায়।
মিশরীয় সভ্যতা বা ফারাও রাজবংশের ধ্বংস হওয়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো- রাজ পরিবারে বিশুদ্ধ রক্ত বজায় রাখতে তারা ঐ সকল মহিলাদের কেও পরিস্থিতি সাপেক্ষে বিয়ে করতো, এমনকি যদি রাজবংশে উপযুক্ত কোন পাত্র পাত্রী পাওয়া না যেত তাহলে আপন ভাই- বোনেরও বিয়ে হতো। যেটার প্রমাণ পাওয়া যায়- সর্ব কনিষ্ঠ ফারাও সম্রাট তুঁতেনখামেন বিয়ে করেছিলেন তার বোন আখিঁসেনামন কে। এবং বহু ইজিপ্টোলজিস্ট তথা বিজ্ঞানীদের ধারণা যে তুতেনখামেন অল্পবয়সে মৃত্যু বরণ করেছিলেন পারিবারিক কারণে রক্তদূষণ (ছোট ক্ষত অসুস্থতা শুরু) থেকে।
কথাগুলো বলার কারণ হলো- 'পুরুষের লাল রংয়ের পোশাক পরিধান করা হারাম'- এ বিষয়টির জন্য।
একটি সুনির্দিষ্ট রংয়ের পোশাক কেন হারাম হবে?
মানুষের দেহ হলো একটি রাসায়নিক কারখানা। এবং পুরুষের দেহ ও নারীর দেহের গঠনগত, হরমোন তথা রাসায়নিকের মাঝেও পার্থক্য রয়েছে। মানবদেহের প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অতি সংবেদনশীল এবং এগুলো রাসায়নিকভাবেও খুবই সক্রিয়। অন্যান্য সকল উপাদানের সাথে ক্রিয়া-বিক্রিয়া করে থাকে যার সামান্য কিছু আমরা বুঝতে পারি আর অনেক কিছুই আমরা বুঝিনা বা অনুভব করতে পারিনা।
জীবাণুমুক্ত একটি মোটা সূচ দিয়ে ইনজেকশন নিলেও পাঁচ মিনিট পর দৈহিক প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক হয়ে যায় কিন্তু কখনো আবার একটি মশার কামড় একজন মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে যায়।
আরার দেখুন- ক্লোরোফরা এক্সেলসা বা ডিনিজিয়া এক্সেলসা নামে আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় একটি গাছ আছে। সে গাছের নিচে গিয়ে দাড়ালে আপনার ঘুম ঘুম ভাব হবে, গাছ বা পাতা শুধু স্পর্শ করলে বমি হয়, সারা শরীরে চুলকানি হয়, শরীর জ্বালাপোড়া করে আর পাতা খেলে বা বৃষ্টির সময় গাছের নিচে দাড়ালে অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুও হতে পারে।
(গাছের ছবি দেখুন। এরকম একটি গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলায়)
বিষয়টি ভেবে দেখার মতো- শুধুমাত্র স্পর্শ করলেই মানবদেহের সাথে বিক্রিয়া হচ্ছে এমন কি বাতাসের মাধ্যমেও!
হাদিসে বর্ণিত লাল এবং হলুদ রংয়ের বিষয়টির ক্ষেত্রেও এমনই একটি সুক্ষ্ম রসায়ন/বিজ্ঞান/যুক্তি লুকিয়ে আছে!
একটি বিষয় আমাদের পরিষ্কার ভাবে বুঝতে হবে যে- "রং" শব্দটিকে আমরা দুই ভাবে চিনি, ১) দৃশ্যমান বা দেখতে কেমন দেখাচ্ছে এবং ২) বস্তু রং (Paint) বা রাসায়নিক উপাদান।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ বা হারাম করেছেন- ২ নং তথা 'বস্তু লাল রং' দিয়ে কোন কাপড় চোপড়কে রাঙিয়ে শুধুমাত্র লাল বা হলুদ রংয়ের পোশাক তৈরি করে পরিধান করাকে।
তার কারণ হলো- ঐ যুগে (এবং তারও আগে থেকেই) প্রকৃতিতে পাওয়া বিভিন্ন উপাদান দিয়ে কাপড়চোপড় রঙ্গিন করা হতো। তখনকার আরবে প্রধানত তিন ধরনের ফুলের নির্যাস থেকে কাপড়চোপড় লাল ও হলুদ রং করা হতো। তার প্রথমটি হলো জাফরান এবং অন্য দুটি হলো- উসফুর ও ওরস।
যেহেতু ফুলের নির্যাস এক ধরণের রাসায়নিক এবং মানবদেহ তথা পুরুষদের দেহ ও রাসায়নিক তাই এই রাসায়নিক দুটির ক্রিয়া/বিক্রিয়া ঘটে। আর এই ক্রিয়া/বিক্রিয়া নিশ্চয়ই পুরুষদের দেহের জন্য মঙ্গলজনক নয় তাই হাদিসে এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
এই সুন্নাহটির নিশ্চিত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো বের হয়নি, তবে অন্যান্য হাদিসের মতো (মদ পান হারাম, ওজু করা, ডানপাশে কাত হয়ে শোয়া, মিসওয়াক করা ইত্যাদি) এই হাদিসটিরও বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ যৌক্তিকতা একদিন অবশ্যই প্রমাণিত হবে।
তবে লালের সাথে অন্যান্য রংয়ের মিশ্রণযুক্ত কাপড় পরিধান করা হারাম নয়, শুধুমাত্র লাল এবং একটি পোশাক সম্পূর্ণভাবে লাল রংয়ের হলেই তাকে হারাম করা হয়েছে।
.......আর মূলত এই "রাসায়নিক" কারণেই পুরুষদের জন্য রেশমি কাপড় এবং স্বর্ণ পরিধান করাও হারাম করা হয়েছে।
..............
শেষ করার আগে দুটি হাদিস দেখে নেয়া যেতে পারে-
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আলি (রাঃ) কে দুইটি হলুদ রঙয়ের কাপড় পরা অবস্থায় দেখলেন। তিনি তখন বলেন, এই রঙ কাফেরদের জন্য, এই রঙের কাপড় পরিধান করো না। মুসলিমঃ ২০৭৭
হাসান ইবনু দাঊদ মুনকাদিরী (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিষেধ করেছেন, আর আমি বলি না যে, তোমাদের নিষেধ করেছেন- সোনার আংটি রেশম মিশ্রিত কাপড়, গাঢ় লাল রং-এর কাপড় এবং কুসুম (হলুদ) রং-এর কাপড় পরিধান করা এবং রুকু অবস্থায় কোরআন থেকে। (নাসাঈ ১১৪৫)
হযরত উমর (রাঃ) বলেন,রসুলুল্লাহ (সাঃ)আমাদেরকে লাল রঙের পোশাক পরতে নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ,ইবনে মাজাহঃ ৩৫৯১)
[বিষয়টি নিয়ে আমি দীর্ঘদিন ভেবেছি, সুশিক্ষিত ইসলামি পণ্ডিত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলেছি, তাদের বক্তব্য শুনেছি। অনেকের যুক্তি মনপুত হয়েছে এবং অনেকের যুক্তি ছিল- নবী সাঃ বলেছেন তাই এর উপরে আর কোন কথা নাই- এতো কারণ খুঁজতে যাওয়ার কি আছে?! যাহোক আমি আমার ব্যক্তিগত ভাবনা তুলে ধরেছি, আপনার ভালো নাও লাগতে পারে।]
ধন্যবাদ
মাসুদ আলম
১০-০২-২০২১