নবাব আব্দুর রহিম : গত আগস্টে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। এটা এখন সবাই জানে যে এফ-৩৫ বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েই দেশটির কাছ থেকে ইসরায়েলের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছিল ট্রাম্প। ওই সময়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও রাজি হয়েছিলেন এ বিষয়ে।
কিন্তু সম্প্রতি এটা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে নেতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। কংগ্রেসম্যানদের দাবি, ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দেওয়ার সময় বিবেচনার জন্য কংগ্রেসকে যথেষ্ট সময় দেননি ট্রাম্প। ফলে নতুন করে এ নিয়ে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন কংগ্রেসের সদস্যরা।
দীর্ঘদিনের মিত্র হওয়ার পরেও অধিকাংশ সিনেট সদস্যরা আরব আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে নারাজ। সিনেটররা এর একাধিক কারণও বর্ণনা করেছেন।
যেমন- ইয়েমেনে সহস্রাধিক নাগরিককে হত্যা। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র দিয়েই ইয়েমেনে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছিল সৌদি নেতৃত্বাধীন এই জোট। ট্রাম্প প্রশাসন এ বিষয়ে নিরব ভূমিকা পালন করলেও ডেমোক্র্যাটরা সহ অনেক সিনেটরই এটি মানতে নারাজ। তাদের দাবি, ইয়েমেনে উগ্রবাদীদের সমর্থনও দিচ্ছে আরব আমিরাত। তাছাড়া নতুন করে অস্ত্র বিক্রি করলে তারা আবারও ইয়েমেনে আগ্রাসনে এই অস্ত্র ব্যবহার করবে। একইভাবে লিবিয়ায় অস্ত্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে।
সিনেটরদের আরেকটি ভয়- চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আরব আমিরাতের সম্পর্ক। এর মধ্যে তুরস্ককে ঠেকাতে লিবিয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে বেশ মাখামাখি করেছে আমিরাত। সেখানে আমিরাত রাশিয়ান ভাড়াটে সৈন্যদের আর্থিক সহযোগিতাও জুগিয়েছে। ফলে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আমিরাতের সম্পর্কের উন্নতি হলে মার্কিন গোপনীয়তা তাদের হাতে পড়তে পারে।
সিনেটরদের তৃতীয় ব্যাখ্যা হচ্ছে- আরব আমিরাতকে এফ-৩৫ দিলে মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্রের ঝনঝনানি বাড়বে। এতে ঝঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ ওই অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। আমিরাতকে অস্ত্র দিলে অন্য মিত্রদেশগুলোও অস্ত্রের দিকে মুখিয়ে থাকতে পারে।
তবে সিনেটের সবচেয়ে সতর্কতার বিষয় হচ্ছে ইসরায়েল। অন্য অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও অধিকাংশ সিনেটররাই ইসরায়েলের নিরাপত্তার স্বার্থে আমিরাতকে অস্ত্র দিতে চাইছেন না। এমনকি ডেমোক্র্যাট ইলহান ওমরের মত খ্যাতনামা সিনেটররাও এ বিষয়ে একমত।
মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র ইসরায়েলই এফ-৩৫ ফাইটার জেটের অধিকারী। আমিরাতের দাবি, ইরানকে টেক্কা দিতে দেশটিকে অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত হওয়া দরকার। তাছাড়া ইসরায়েলের নিরাপত্তার স্বার্থেও আমিরাতকে শক্তিশালী হতে হবে। আমিরাতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পর গত অক্টোবরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ আমিরাতের কাছে এফ-৩৫ বিক্রিতে সম্মতি দেন। যদিও পরবর্তীতে গান্টজ বলেন যে নেতানিয়াহু তাকে বিভ্রান্ত করেছিলেন।
পুরো মুসলিম বিশ্বের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে আরব আমিরাত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল। আশা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফ-৩৫ ক্রয় করবে তারা। মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি ভয় কাটাতে এবং ইরান ও তুরস্কের বিপরীতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে এই অস্ত্রটি তাদের খুবই প্রয়োজন। কিন্তু এ আশায় এখন গুড়েবালি।
গত ১৮ নভেম্বর সিনেট সদস্যরা ওইসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন। কাকতালীয় কিনা জানি না- একইদিন থেকে ১৩টি ইসরায়েল বিরোধী দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ ও শ্রমিক ভিসায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে আরব আমিরাত। মূলত আমিরাত ভাবছে ইহুদি লবি বৃদ্ধি করলেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়ে কোন অসুবিধা হবে না। ফলে আরব আমিরাত সামনে ইসরায়েলের প্রতি আরও বেশি ঝুঁকবে বলেই মনে হচ্ছে। তবে এফ-৩৫ পাওয়া সম্ভব হবে কিনা সেটা এখন অনেকটাই অনিশ্চিত।