মোঃ কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, নোয়াখালী : দ্বিতীয় দফায় কক্সবাজার থেকে আরো ১ হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে।মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১ টার দিকে রোহিঙ্গাদের বহনকারি নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজ ভাসানচরে এসে পৌঁছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে চট্রগ্রামের পতেঙ্গায় নৌবাহিনীর জেটি থেকে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় তাদের বহনকারী পাঁচটি জাহাজ।
দ্বিতীয় দফায় স্বেচ্ছায় ভাসানচর যেতে কক্সবাজার আশ্রয় শিবির ত্যাগ করেন ৪২৭ টি পরিবারের ১ হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গা। তাদের নিয়ে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টায় থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ৩০ টির বেশী বাস চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। রাতে তারা বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থান করেন। তাদের মধ্যে ১৩০ জনের বেশী রয়েছে প্রথম দফায় যাওয়া রোহিঙ্গাদের স্বজন। এর আগে স্বেচ্ছায় ভাসানচর যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা নিজ নিজ শিবিরের কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে নিজেদের নাম অর্ন্তভূক্ত করেন।তারপর ভাসানচরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা রোহিঙ্গা শিবির হতে বের হন।
ভাসানচরে দায়িত্বরত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মামুন জানান, দ্বিতীয় দফায় ৭০০ রোহিঙ্গা স্থানান্তরের সরকারি পরিকল্পনা থাকলেও প্রায় ১৮০০ এর বেশি রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসান চরে এসে পৌছেঁছে। আগত রোহিঙ্গাদের এক সপ্তাহ রান্না করে খাওয়ানো হবে।
গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে আনুষ্ঠানিকভাবে নারী-পুরুষ,শিশুসহ নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে পৌঁছে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত ৭,৮,৯,১০ নম্বর ক্লাষ্টারে তাদেরকে রাখা হয়।১ সপ্তাহ নৌবাহিনী তত্ত্বাবধানে তাদেরকে রান্না করে খাওয়ানো হয়। প্রথমধাপে ভাষানচরে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে ৮১০জন,পুরুষ ৩৬৮জন,নারী ৪৬৪জন।
এর আগে চলতি বছরের ৮ মে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জল সীমায় ভাসতে থাকা ২৭৭ রোহিঙ্গাদের আরো একটি দলকে ভাসান চরে স্থানান্তর করা হয়। এ দলটিতে নারী-পুরুষও শিশু সহ মোট ২৭৭ জন সদস্য ছিলো। ৮ মে দুপুরে দিকে ওই রোহিঙ্গার দলটি কে নৌবাহিনী সদস্যরা ভাসান চরে নিয়ে যান। কক্সবাজারের বঙ্গোপসাগরে বোটে ভাসমান অবস্থা থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। তাদের নিরাপত্তায় নৌবাহিনী ও ৫০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। উদ্ধার করা দলটিতে ৯২ জন পুরুষ, ১৫৭ জন নারী ও ২৮ জন শিশু ছিল। এর আগে গত ৩ মে ২৯ জন রোহিঙ্গাকে ভাষান চরে পাঠনো হয় ।ভাষানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পূর্বের ৩০৬ জন, প্রথম ধাপে ৪ ডিসেম্বর এক হাজার ৬৪২ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে এক হাজার ৮০৪ জন নিয়ে ভাসানচরে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়ালো তিন হাজার ৭শ ৫২ জনে।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল হাতিয়ায় মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠা ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান শেষ হয়। ২০১৯ ইং সালের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও আগেই শেষ হয় সকল অবকাঠামো নির্মান। হাতিয়া থেকে প্রায় ৫০কিলোমিটার দূরে এবং জেলার মূল ভূখন্ড থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোনের সমুদ্র উপকুলবর্তী ভাসানচরের সৌন্দর্য অন্যান্য দ্বীপের মতো না হলেও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এটি গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক লীলাভূমির এক অপূর্ব সৌন্দর্য দ্বীপে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। ৩০ জন ঠিকাদারের অধীনে এ স্থানে প্রায় ১৪ হাজার শ্রমিক কাজ করে। এ আশ্রায়ন প্রকল্পে আছে ১শ ২০টি সাইক্লোন সেন্টার, স্কুল কমিউনিটি ক্লিনিক, ৩টি মসজিদ, বসবাসকারীদের জন্য আছে বায়ু গ্যাস প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ভাসানচরের ভুমি উন্নয়ন ও তীর রক্ষা বাঁধ নির্মান এবং এক হাজার ৪শ ৪০টি ব্যারাক হাউস। আরও আছে ৪ তলা বিশিষ্ট ১২০টি শেল্টার ষ্টেশন। রোহিঙ্গাদের জন্য থাকছে মসজিদ, দ্বীপটির নিরাপত্তার জন্য নৌ-বাহিনীর অফিস ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য বাসভবন। এ ছাড়া আরো আছে অভ্যন্তরীন সড়ক, মিঠা পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন অবকাঠামো। পাশাপাশি গভীর নলকুপ ও পুকুর খনন করে ভাসানচর দ্রুত প্রস্তুত রয়েছে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের জন্য। চরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কি:মিটার এবং প্রস্থ্য ১৪ কি:মিটারব্যাপী। এ ভাসানচরে প্রায় ১২ কিলোমিটারব্যাপী লোকজনের উপযোগি করে গড়ে তোলা হয়। এখানে তাদের খাদ্য ও সুপেয় পানিসহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে। গত ৬ জানুয়ারী ১৮ ইং থেকে শুরু হয়ে এপ্রিল ১৯ ইং পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময়ে সরকারের অন্যান্য সংস্থাটির পাশপাশি নৌ-বাহিনী মূল অবকাঠামো নির্মান করে। বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর প্রজেক্ট ডাইরেক্টর কমোডোর আব্দুল্লাহ আল মামুন এনডিসি, পিএসসি-সর্বক্ষণিক কাজের তদারকি করেন।