তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান ভূষণ তালুকদারের বিরুদ্ধে ৮/৯ লাখ টাকার অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দের পক্ষে আব্দুন নূর আফিন্দী, ফজলুল হক গোলাপ ও কামাল মিয়া সহ বেশ কয়েকজন রোববার জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অনিয়মের বিরুাদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে উল্লেখ, মহামারি করোনা ভাইরাসের শুরু থেকে জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পরও প্রধান শিক্ষক বিধান ভূষণ চক্রবর্তী রশিদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিফিন (জলযোগ) খরচ বাবত ৮/৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী না খেয়ে টিফিনের টাকা নেয়ার কারন কি প্রশ্ন করলে তারা বলেন এত প্রশ্ন না করে টাকা দাও।
গেল বছরের অক্টোবর/নভেম্বর মাসেই নবম শ্রেণীর রেজিষ্টেশনের সময় অত্যন্ত কৌশলে শিক্ষার্থদের নিকট থেকে এই টাকা আদায় করা হয়েছে। করোনাকালিন সময়ে অসংখ্য অভিভাবকরা যেখানে পরিবার নিয়ে চলতে হিমসিম খাচ্ছেন, সেখানে অতিরিক্ত টাকা দিতে তারাও রীতিমতো চরম কষ্ট শিকার করতে হয়েছে। বিষয়টি উপজেলার সিনিয়র এক গণমাধ্যমকর্মী ফেসবুকে স্যাটাস দিলে সামাজিক যোগাযোগে তীব্র নিন্দ ও সমালোচনার ঝড়উঠে। বিষয়টি তদন্ত করে টাকা ফেরত ও ব্যবস্তা নিতে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। অভিযোগের কপি, বিভাগীয় কমিশনার (সিলেট), অঞ্চলিক শিক্ষা প্রধান (ডিডি), জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষাথীর পিতা বুরুজ আলী তার অসহায়ত্বে বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘ভাই একটা কথা শুনেন। আমি দিনমজুর, রোজ আনি রোজ খাই, যা পাই কোন রকম সংসার চলে, অন্যের জায়গায় ঘর বানাইয়া থাকি। খুব কষ্ট করে মেয়ে দুইটারে লেখা-পড়া করাইতেছি। জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নাইনে পড়ে আমার মেয়েটা, সারা বছর ইসকুল বন্ধ তার পরেও পেট থেকেই বেতন দিতে অইছে। ইসকুল বন্ধে আমার মেয়ে ইসকুলেও যায়নি টিফিনও খায়নি, তবোও খাওয়ার বিল দিছি ৭’শ টাকা। কইন এহন আমরা গরিবরা কই যাই। শুধু তিনিই নয় অসংখ্য অভিভাবকবৃন্দ জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান ভূষণ চক্রবর্তীর প্রতি ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশ করে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারনে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিলেন।
করোনা কালেও সরকারী নির্দেশ অমান্য করে সেপ্টেম্বর থেকেই শিক্ষার্থীদের শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে প্রায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বেতনসহ জলযোগ (দুপুরের টিফিন) বাবত ৬৩০ থেকে ৭’শ টাকা হারে আদায় করা হয়েছে জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, জলযোগে টাকা আদায় একমাত্র প্রধান শিক্ষকের এখতিয়ারেই হয়েছে। জানা যায় ওই বিদ্যালয়ে ৬-ষ্ঠ থেকে ১০-ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ১৪’শ মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। ৯-ম শ্রেণী শিক্ষার্থীদের বোর্ডে নাম রেজিষ্টেশনের সময় ‘জলযোগ (দুপুরের টিফিন) বাবত-৭’শ থেকে ৬৩০, বেতন-১০৪০ থেকে ৩৫’শত পর্যন্ত রেজিস্টেশন-২৩০, সিলেবাস--১০ টাকা নেয়া হয়েছে। বাকী ৪ ক্লাশের শিক্ষার্থীদের কি অবস্থা এ নিয়ে জনমনে বিরুপ প্রতিক্রীয়া দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অতিরিক্ত টাকা ও বেতন আদায় নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে। এছাড়া ওই বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রাইভেট কোচিং বাণিজ্যেও এলাকাবাসী চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক দাবী করেন, নির্দেশনার পর তারা বেতন নিয়েছেন। কিন্ত বেতন প্রাপ্তির রিসিটে তাঁর কথার কোন মিল পাওয়া যায়ানী। জলযোগে টাকা নিলেন কেন জানতে চাইলে কোন উত্তর না দিয়ে বলেন এটা হেড স্যারে নির্দেশে।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ায়ে প্রধান শিক্ষক বিধান ভুষণ চক্রবর্তী মুঠো ফোনে (০১৭২০৬০০৯৫৮) কল দিলে তিনি বলেন, মোবাইলে কিছু বলা যাবেনা। স্কুলে আসেন পরে কথা হবে।
জামালগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুল কবীর কে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের রশিদ দেখালে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানিনা, এখন দেখলাম, সম্প্রতি একটা নির্দেশনা অছে বেতনের ব্যাপারে তবে নির্দেশনার অগে নেয়াটা হয়নি, আর জলযোগের টাকা তো নেয়ার কথাইনা তবোও আমি খুঁজ নিয়ে দেখবো।
সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনা কালে কোন বেতন না নেয়ার নির্দেশ ছিলনা, সম্প্রতি একটা নির্দেশনা এসেছে ওই নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে হবে। আর জলযোগের টাকা তো নিতেই পারেনা। তবে বিষয়টি খুঁজ নিয়ে পরবর্তীতে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত দেব বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। এখনতো এডহক কমিটি অতিরিক্ত জলযোগের টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। আমি বিষয়টি গুরুত্বে সাথে দেখবো।