এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম): ছোট বেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় একটা পা হারায় সাহেদা আক্তার খুকি। কিন্তু পা হারিয়ে সে থেকে থাকেনি। এক পায়ে ভর করে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা।
উপজেলার দক্ষিণ খাজুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী ও জাফরাবাদ বালিকা বিদ্যালয় খেকে এসএসসি পাস করেন। কিন্তু দরিদ্র বাবা সংসার এবং বাবা অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার কারনে আর পড়ালেখা করা জুটেনি সাহেদার কপালে।
পড়ালেখা বন্ধ হয়ে পড়লেও বসে থাকেনি সাহেদা। নেমে পড়েন জীবন যুদ্ধে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি নানা প্রতিবন্ধকতা ফেরিয়ে সাহেদা এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। দরিদ্রতার বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রামের মাধ্যমে আর্থিক সফতার অর্জনকারী হিসেবে মিহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক মিরসরাই উপজেলা ও চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা ২০২০ ইং নির্বাচিত হন তিনি।
সাহেদো আক্তার মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের শামছুল হকের মেয়ে।
সাহেদা আক্তার জানান, তাদের দুই ভাই ও তিনি বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। তার বাবার মৃত্যুর পড়ে তাদের সংসার চালানোর কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। লেখাপড়াও আর হয়ে উঠছে না।
তখন বাড়িতে বসে না থেকে এক জায়গায় সেলাই শেখার কাজে নেমে পড়েন। অল্প কিছু দিনের মধ্যে সেলাই কাজও শেখা হয়ে যায়। কিন্তু কাজ করার জন্য কোন মেশিন কেনার অর্থ নেই তার কাছে। একপর্যায়ে বেসরাকরি উন্নয়ন সংস্থা উপকূল সমাজ উন্নয়ন সংস্থা তার পাশে এসে দাঁড়ায়।
সংস্থা থেকে তাকে একটি সেলাই মেশিন দেয়া হয়। এরপর ওই সংস্থার সহযোগীতায় ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম হালিশহরের শ্যামলী আবাসিক এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে শুরু করেন জীবন যুদ্ধের পথচলা। শারীরিক প্রতিবদ্ধকতাকে চ্যালেঞ্জ করে আর্থিক ও সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দিনরাত নিরলস ভাবে কাজ করতে থাকেন।
অল্প দিনে তার কাজেরও চাপও বাড়তে থাকে। নিজের সেলাই কাজের পাশাপাশি সেখানে বেকার মেয়েদের সেলাই প্রশিক্ষন দেয়া কাজও শুরু করেন। এরমধ্যে উপক‚ল সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে একটি কৃত্রিম পা সংযোজন করায় কিছুটা স্বাভাবিক চলাফেরার সুযোগ পাচ্ছেন।
বর্তমানে তিনটি সেলাই মেশিনে তিনি সেলাই কাজ ও প্রশিক্ষনের কাজ করেন। চার থেকে আট জনেরগ্রুপ করে তিনি সেলাই প্রশিক্ষন দেন। তার কাজের অর্থ দিয়ে মা ভাই বোনদের সহযোগীতা করেন।