এম,মনিরুজ্জামান,রাজবাড়ী প্রতিনিধি : রাত পোলালেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজবাড়ীর পাংশা পৌরসভার নির্বাচন।এটা পাংশা পৌরসভার পঞ্চম।এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে জমে উঠেছে গোটা পাংশা পৌরসভা এলাকা। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের আহবায়ক ফজলুল হকের নির্বাচনী প্রচারনা। পিছিয়ে নেই প্রতিদ্বন্দি ৪২জন সাধারন ও ১১জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। ধানের শীষের প্রচারনাও আছে।
পৌর এলাকার সর্বত্র পোষ্টার ব্যানার ও বড় বড় প্রতীকে ছেয়ে গেছে।নবরুপে সেজেছে পাংশা পৌর এলাকা।চলছে গনসংযোগ,মাইকে প্রচারনা ও উঠন বৈঠক ও মিছিল।এখন পাংশা পৌর এলাকার সর্বত্র সাজ সাজ রব উঠেছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে পাংশা পৌরসভা নির্বাচন। অর্থাৎ ৩০ তারিখ রাতেই জানা যাবে কে হচ্ছেন রাজবাড়ী পৌর পিতা। প্রচারনার শেষ সময়েও প্রার্থীরা যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
২৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী পৌরসভা পাংশা। “খ” শ্রেণির এ পৌরসভায় মেয়র পদে এবার ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন পাংশা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র ওয়াজেদ আলী মন্ডল। অন্যদিকে নৌকার মনোনয়ন বঞ্জিত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জগ মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন পাংশা উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মোঃ ফজলুল হক ফরহাদ।অবশ্য যুবলীগ রাজবাড়ী জেলা তাকে বহিষ্কার করেছে। অপরদিকে বিএনপির মনোনীত পাংশা পৌর বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর মোঃ রইচ উদ্দিন খান।
একই দলের এ দুইজনসহ তিন প্রার্থীই পাংশা পৌরসভা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তারা ৩জনই পৌরসভার উন্নয়ন, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত এবং পৌরবাসীর দুঃখ-দুর্দশায় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এবার পাংশা পৌরসভার নির্বাচন হবে এনালগ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হবে। ভোট নিয়ে সব বয়সের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ দেখা গেছে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে জমে উঠেছে নির্বাচনি মাঠ। প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। প্রার্থীরা লিফলেট বিতরণ, পোস্টার সাঁটিয়ে, ব্যানার টানিয়ে ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে নির্বাচনি মাঠে নিজেদের প্রার্থী হওয়ার খবর জানাচ্ছেন। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলাচ্ছেন জোর প্রচার-প্রচারণা। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানও জমে উঠেছে নির্বাচনি আলোচনায়। সব মিলিয়ে সরগরম হাজীগঞ্জের তৃণমূলের রাজনীতি।
পাংশা স্থানীয় রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকলেও পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সেই মতবিরোধ এখন আর চোখে পড়ার মত। দলের হাই কমান্ড এবং কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন বলে দাবি নেতাকর্মীদের। ফলে অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নৌকা মার্কার প্রার্থী বর্তমান মেয়র ওয়াজেদ আলী মন্ডল ও তার সমর্থকরা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ওয়াজেদ আলী মন্ডল বলেন, আমি গত ২বারে ১০ বছর পাংশা পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করেছি। একটি টাকাও দুর্নীতি করিনি। কেউ আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও করতে পারেনি। দায়িত্বে থাকাকালে আমি সাধারণ মানুষের আশার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। গরীব এবং মেহনতি মানুষের পাশে সবসময় থাকার চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, করোনাকালিন সময়ে নিজের জীবনবাজি রেখে মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। তাই পাংশা পৌরসভার ভোটারগণ নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।
অন্যদিকে সদাহস্সোজ্জল স্বচ্ছ রাজনৈতিক মনের ধারক বাহক যুব লীঘ নেতা ফজলুল হক ফরহাদ জগ প্রতীক নিয়ে তার অনুসারী নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সাথে নিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিরলস প্রচারনা ও গনসংযোগ চালিয়ে প্রথমবার মেয়র পদে দাঁড়িয়েই পাংশার নতুন-পুরাতন ভোটারদের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছেন।
পৌর এলাকার রাস্তা-ঘাট,ড্রেন,মার্কেট,রিক্সা ও অটোষ্ট্যান্ডের আলাদা ষ্ট্যান্ড করে দেয়াসহ আধুনিক ডিজিটাল পৌরসভায় রুপান্তরিত করে নাগরিক সুবিদা নিশ্চিতের আশ^াস দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে।তাই ফরহাদ এবার পাংশা পৌরসভায় মেয়র পদে সুনিশ্চিত বিজয়ে শতভাগ আশাবাদি।
পাংশায় বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে রয়েছে মতবিরোধ।তবে সাবেক কমিশনার রইচ উদ্দিন খানের ধানের শীর্ষের প্রচারনায় সব নেতাকর্মীই ঐক্যবদ্ব হয়ে জয়ের জন্য কাজ করছেন বলে বিএনপির প্রার্থী জানান।
বিএনপি নেতা-কর্মীরা তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পৌরসভার প্রতিটি ঘরে দলীয় প্রতীক ধানের শীষের সালাম পৌঁছে দিচ্ছেন।
রাজবাড়ী-আসনের সাবেক এমপি বীরমুক্তিযোদ্বা নাসিরুল হক সাবু প্রশাসনের কাছে পাংশা নির্বাচনে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা দাবী করে বলেন, জনগণ ভোট দিতে পারলে ধানের শীষ বিপুল ভোটে বিজয়ী লাভ করবে। মানুষ যেনো ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, পাংশা পৌরবাসী বিএনপির সময়ের উন্নয়নের কথা স্বরণ করে ধানের শীর্ষের প্রার্থীকে বিজয় করবে ইনশাআল্লাহ। পাংশা পৌরসভার উন্নয়নে যে কাজ করবেন তাকেই বেছে নেবে ভোটাররা।
পাংশা পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোঃ মাসুদুর রহমান জানান পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪২ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পাংশা পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ২৪হাজার ৩শ ৪৮জন। পাংশা পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে মোট ৯টি ভোট কেন্দ্র। আগামী ৩০ জানুয়ারি ৯টি ভোট কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।পাংশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহাদত হোসেন জানান, পাংশা পৌরসভা নির্বাচনে ৯ কেন্দ্রের মধ্যে ৫টি কেন্দ্রেই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, প্রার্থীদের সমন্বয় থাকলে কোন কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে না। আমারা সকলের সমন্বয়ে সুষ্ঠু, সুন্দর একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে প্রস্তুত রয়েছি।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, নির্বাচনি পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। যেকোন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমরা কঠোর হবো। তিনি আরো বলেন, পৌরসভার প্রতি ৯টি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অফিসার মোহাম্মদ আলী জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে কেউ কোন বিশৃংখলার সৃষ্টি করলে কোঠর ভাবে দমন করা হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।