উত্তরা প্রতিনিধিঃ রাজধানীর উত্তরায় এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকালে উত্তরার ১৩ নং সেক্টরের ১৩ নং রোডের ৪৩ নাম্বার বাড়ির পঞ্চম তলায় ওই চিকিৎসকের ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় শনিবার দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী বাদি হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, অভিযুক্ত ডাক্তার নিজের দোষ ঢাকতে উত্তরা পশ্চিম থানায় ভয়ভীতি, হুমকি ও চুরির অভিযোগে উল্টো ভুক্তভোগীর বোনের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
ভুক্তভোগী জানান, নেত্রকোণা থেকে কাজের খোঁজে ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে উত্তরার এলাকায় আসেন তিনি। রুবেল নামের একজনের মাধ্যমে ডা. আহসান নুরের বাসায় দুই সপ্তাহ আগে খন্ডকালীন চাকরি নেন। বাসাটিতে সপ্তাহে দু'দিন কাজ করতে হতো তাকে। সেখানে ডা. নুর একাই থাকতেন। শনিবার বেলা ২ টার দিকে কাজে গেলে হঠাৎ ডা. আহসান তাকে পাশের রুমে ডেকে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। পরে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে ডা. নুর।
তিনি আরও জানান, ডাক্তার আমাকে বলেন- ‘আমি ডাক্তার আমার কাছে অনেক ঔষধ আছে, যা দিয়ে তোমাকে কয়েক মুহূর্তের ভেতরে মেরে ফেলতে পারি। তোমার মেয়ে আছে তাকে দেখতে চাও?’ একপর্যায়ে আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে বাসা থেকে বের করে দেয়। বাসায় গিয়ে আমি অসুস্থ হয়ে পরি।
নির্যাতিতা আরও বলেন, দীর্ঘক্ষণ পাশবিক নির্যাতন চালানোর পর এক সময় আমি অসুস্থ হয়ে পরি। তখন আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। সেখান থেকে বের হয়ে নিজের ভাড়া বাসায় এসে ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলাম। পরে ডাক্তার আহসানকে ফোন দিয়ে বলি এ কাজটা আপনি কি ঠিক করলেন স্যার। আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। অসুস্থতার কথা জানালে দোকানে যেয়ে ২ নাপা ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ ও এমন কাজ আর করবেন না বলে আশ্বাস দেন ওই পাষন্ড ডাক্তার। যার কথোপকথনের অডিও রেকর্ড মুঠোফোনে আছে।
অসুস্থতার একপর্যায়ে ভুক্তভোগী তার বড়বোনকে ধর্ষণের বিষয় খুলে বললে ডা. আহসানকে ফোন করেন তার বড় বোন। পরে বিষয়টি জানাজানি হচ্ছে মনে করে তড়িঘড়ি করে উত্তরা পশ্চিম থানায় ভুক্তভোগীর বড় বোনের নাম্বার দিয়ে চুরি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলে সাধারণ ডায়েরী করে অভিযুক্ত ডা. আহসান নুর।
এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ডা. নুরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি আমাকে কেন ফোন করেছেন? অভিযোগ করলেই কি ধর্ষণ হয়ে গেলো। প্রমাণ থাকতে হবে। আমি একটা কাজের লোকের সঙ্গে এ কাজ করবো নাকি। দেশে কি মেয়ের অভাব পড়েছে। এটা কোন দেশ হলো, আমি এখানকার না আমেরিকান সিটিজেন। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাকি। উত্তরায় ওটা আমার নিজস্ব ফ্ল্যাট। আপনি ফোন দেবার কে, কিসের সাংবাদিক।’
থানায় জিডি করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে বলেন, আমাকে থ্রেট করা হয়েছে তাই আমি জিডি করেছি।
ভুক্তভোগীর বড় বোন রোববার সকালে জানান, অভিযুক্ত চিকিৎসক তার দোষ স্বীকার করে এখন আপোস করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ্ আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস জানান, এ ঘটনায় মামলা নেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীকে মেডিকেল টেস্টের জন্য সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে ।