আব্দুল আওয়াল, বাগাতিপাড়া (নাটোর): বিগত বছরগুলোতে চাষিরা নিজেদের উদ্ভাবিত বিনা চাষে রসুনের আবাদে ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় তা চাষে ঝুঁকেছেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে কৃষকরা ব্যাপকহারে রসুন চাষ করায় এই উপজেলায় গত বছরের তুলনায় এবছর প্রায় দ্বিগুণ রসুনের আবাদ হয়েছে। এদিকে সেচ ও সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় এবং অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় এবছরও উপজেলায় রসুনের বাম্পার ফলন হবে বলেও আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
উপজেলার সাইলকোনা গ্রামের লহিব উদ্দিন , বিলগোপালহাটির আখের আলী এবং শ্রীরামপুরের আমিরুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বিঘা জমিতে পর্যাপ্ত পরিমানে জৈব সার, ২৫ থেকে ৩০ কেজি টিএসপি, ২০ থেকে ২৫ কেজি পটাশ ও ১৫ কেজি জিপসাম ছিটানোর দুই-এক দিনের মধ্যে নরম জমিতে সারিবদ্ধভাবে রসুন বীজ রোপণ করেছেন তারা। জমিতে রসুন রোপণের দিনই খড় বা বিচালি দিয়ে জমি ঢেকে দিয়েছেন।
জমিতে রোপণের জন্য প্রতি বিঘা জমিতে আড়াই মণ হারে রসুনের বীজ প্রয়োজন হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ১০ হাজার টাকা। আবার রসুন উঠা পর্যন্ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও সেচ বাবদ প্রায় ১২ হাজার টাকা এবং শ্রমিক বাবদ প্রায় ১১ হাজার টাকা খরচ হবে। আর ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ মণ হারে রসুন পাওয়া যাবে। বাজার মূল্য ভালো থাকলে বিঘা প্রতি সব খরচ বাদে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা তাদের।
আরও জানা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরে ফলন ভালো হওয়ায় এবং ভালো দাম পাওয়ায় এ বছরও কৃষকরা ব্যাপকহারে রসুনের আবাদ করেছেন। এবার রসুন বীজের অঙ্কুরোদগমও ভালো হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় এবং প্রয়োজনীয় সেচ ও সার পাওয়ায় রসুনের চারা এখন দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রসুনের বাম্পার ফলন হবে এমনটাই আশা করছেন তারা। আর তাই রসুন চাষিরা সকাল-সন্ধ্যা দিনমজুর ও স্ত্রী-পুত্রদের সাথে নিয়ে রসুনের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
কাঁকফো পুরাতন পাড়া গ্রামের ওসমান আলী জানান, গত বছর তিনি ২ বিঘা জমিতে রসুনের চাষ করেছিলেন। লাভবান হওয়ায় এবছর ৬ বিঘা জমিতে রসুনের আবাদ করেছেন। গত বছরের মত দাম থাকলে এবছর তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা তাঁর।
দেবনগর গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, স্থানীয় কৃষকদের পরামর্শে তিনি এছরই প্রথম দেড় বিঘা জমিতে রসুনের আবাদ করেছেন। কৃষক আবু তালেব জানান, গ্রামের মানুষদের রসুনে লাভবান হওয়া দেখে স্ত্রী-পুত্রের কথায় এবারই প্রথমবারের মত ২৪ শতাংশ জমিতে রসুন চাষ করেছেন। তাদের মত এরকম আরও অনেক কৃষক এবছরই প্রথম রসুনের আবাদ করেছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী বলেন, চলতি মৌসূমে বাগাতিপাড়ায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে রসুনের চাষাবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বিগত কয়েক বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবং ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা এ বছর রসুন চাষে ঝুঁকেছেন। আর বর্তমানে এই এলাকার কৃষকদের নিকট রসুন একটি অর্থকরী ফসল হয়ে উঠেছে।
