সোহরাব হোসেন, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ): মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আবারো মাটি কাটার হিড়িক পড়েছে । এবার মাটি খেঁকো চক্রটি রাতের আঁধারে ফসলি জমির টপসয়েল অবাধে কেটে নিচ্ছেন ইটভাটায়।
সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ রাতের বেলা হওয়ায় তারা ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। ফলে চক্রটি তাদের ইচ্ছেমতো ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। দেখার যেন কেউ নেই।
সোমবার (৫ এপ্রিল) সরেজমিন উপজেলার চারিগ্রাম ইউনিয়নের চর দাসেরহাটি চক,বলধারা ইউনিয়নের খৈয়ামুড়ি চকের গুনাইর বিল ও বায়রা ইউনিয়নের সানাইল চকে গিয়ে দেখা গেছে, চর দাসেরহাটি চক থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছেন দাসেরহাটি গ্রামের মৃত হাকিম আলীর পুত্র আব্দুল করিম।
তিনি মাটি বিক্রির জন্য নদী গ্রুপের মালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে ও আশপাশের জমির মালিকদের ফসল নষ্ট করে ট্রলি চলাচলের জন্য রাস্তা বানিয়ে জমজমাট মাটির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে আব্দুল করিম জাইল্ল্যা ও দাসেরহাটি চক থেকে এভাবে মাটি বিক্রি করেন। বিষয়টি নিয়ে জনৈক সাংবাদিকের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন মাটির কাজে ব্যবহ্নত ট্রলির ড্রাইভারকে আটক করলেও বয়স কম হওয়ায় সে ছাড়া পায়। তারপরও থেমে নেই তাদের জমজমাট মাটির ব্যবসা।
এদিকে ,বলধারা ইউনিয়নের খৈয়ামুড়ি ভুলতার বিল চক থেকে কেটে নেয়া হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। ওই চকে জনৈক বজলুর রহমানের ৪০ শতাংশ জমি থেকে ১২ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিচ্ছে ভূমি খেঁকো চক্র। পুকুর খননের অজুহাতে ফসলি জমির মাটি কিনে আশপাশের জমির ক্ষতি করে ট্রলি চলাচলের জন্য রাস্তা বানিয়ে উত্তর জাইল্ল্যা গ্রামের রহমত আলীর পুত্র ফরশেদ আলম ও স্থানীয় ই¯্রাফিলসহ আরো কয়েকজন এ মাটির ব্যবসা করছেন। দীর্ঘ দিন ধরে তারা রাতের আঁধারে ফসলি জমির টপসয়েল কেটে বিভিন্ন বসতবাড়ি ডোবা-নালা ও ইটভাটায় বিক্রি করছেন।
এ ছাড়া বায়রা ইউনিয়নের সানাইল চকে গিয়ে দেখা গেছে , এবিসি ব্রিকসের মাটি কাটায় ব্যবহ্নত দুটি ভেকু দিনের বেলায় আড়াল করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্ষন্ত চলে এ ভেকু দিয়ে মাটি কাটা। প্রশাসনের নজর এড়াতে দিনে মাটি কাটা বন্ধ রাখা হয়। অনুরুপ, খোলাপাড়া চক থেকেও একই পন্থায় পার্শ্ববর্তী ইটভাটাগুলোতে নেয়া হচ্ছে এ মাটি। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হলেও এখন তা ঝিমিয়ে পড়েছে। ফলে মাটি কাটা চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, মাটি ব্যবসার সাথে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দ করতে সাহস পাচ্ছে না। এভাবে মাটি কাটা চলতে থাকলে ফসলি জমি নষ্ট হয়ে খাদ্য সংকট দেখা দেয়াসহ পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিজ্ঞজনেরা ।
জাতীয় দৈনিক পত্রিকার জনৈক স্থানীয় রিপোর্টার অভিযোগ করে বলেন, ফসলি জমি থেকে রাতের আঁধারে একাধিক সুনির্দিষ্ট স্পটে মাটি কাটার বিষয় নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করলেও তিনি কোন ফল পাননি।
মাটি ব্যবসার সাথে জড়িত আব্দুল করিম ও ফরশেদ আলমের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। তবে এবিসি ব্রিকসের স্বত্ত্বাধিকারী নুরুল হক কোম্পানীর পুত্র আব্দুল আউয়াল বলেন, আপনার জমিতো আর মাটি কাটছি না।
আমার জমি আমি যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে ব্যবহার করছি।
মাটি কাটা প্রসঙ্গে চারিগ্রাম, বলধারা ও বায়রা ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারি কর্মকর্তা মোঃ খায়রুল বাশার, মোঃ আতিকুল ইসলাম ও মোঃ ঝিলন খান রাতের আঁধারে মাটি কাটার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দিনের বেলা মাটি কাটাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুনা লায়লা বলেন, রাতে মোবাইল কোর্ট করার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা থাকায় আইন শৃংখলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ডিসি স্যারের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদেরকে নিয়মিত মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।