রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

রোহিঙ্গা শরণার্থী (জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক) প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
উপদেষ্টার সঙ্গে আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (UNHCR) Flippo Grandi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎকালে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গাদের কারণে সৃষ্ট নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমস্যা, বিভিন্ন দেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন কার্যক্রম, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএস-এইড এর আর্থিক সহায়তা বন্ধের ফলে উদ্ভূত সমস্যা মোকাবেলা, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পুনর্বাসন-সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
হাইকমিশনারকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে ১৩ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয় দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ার কারণে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গারা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশ মানবিক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শনের জন্য উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, নিজ দেশ মিয়ানমারে নির্যাতিত ও বাস্তুচ্যুত হয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে মিয়ানমারের পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। তাছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এখন আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে। তাই এ মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিরাপদ নয়। তবে এ বিষয়ে হাইকমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, আমরা যদি অনবরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে থাকি, সেক্ষেত্রে মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ সরকার তাদের ফেরত নাও নিতে পারে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। সুতরাং, তাদের প্রত্যাবাসনের মূল দায়িত্বও তাদের। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউএস-এইড এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করা বন্ধ করে দেয়, সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের জন্য দাতা সংস্থা ও অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদের মাধ্যমে তহবিল জোগানের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারকে অনুরোধ করছি।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন বিষয়ে হাইকমিশনার বলেন, ভাসানচর পুনর্বাসনের জন্য অনুপযুক্ত নয়, তবে সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ কম। মাটি লবণাক্ত হওয়ায় সেখানে কৃষিকাজের সুযোগ সীমিত। এসময় উপদেষ্টা বলেন, দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীরা এগিয়ে এলে সেখানে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করা যাবে। তাছাড়া সেখানে গবাদিপশু লালন-পালন ও সংশ্লিষ্ট শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।
সাক্ষাৎকালে UNHCR এর এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিয়নাল ব্যুরোর ডাইরেক্টর Hai Kyung Jun, UNHCR এর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ
Sumbul Rizvi, UNHCR বাংলাদেশ অফিসের সিনিয়র এক্সটার্নাল রিলেশনস অফিসার Romain Desclous সহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।