হানিফ ওয়াহিদ : শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছি। একটা আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এলো। আইডির নাম,'জ্বীন'।
আমি সাথে সাথে একসেপ্ট করলাম। প্রোফাইলে অসম্ভব সুন্দর একটা মেয়ের ছবি। এই মেয়ের তো 'পরী' হওয়ার কথা ছিল,'জ্বীন' কীভাবে হলো বুঝলাম না!
মেয়েটা মেসেজ দিল,ভাইয়া কী করেন?
আমি বললাম,বইন রে, আয়াতুল কুরসি পড়ছি?
ও মা! আয়াতুল কুরসি পড়ছেন,কেন?
লে বাবা! জ্বীন,ভূত দেখলে আয়াতুল কুরসি পড়তে হয়,সেটাও জানেন না? আশ্চর্যকথা!
বউ বাসায় নাই, রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে বউকে বলেছিলাম, এক সপ্তাহ তুমি আমাকে দুলাভাই বলে ডাকবা?
বউ অবাক হয়ে বললো, ও মা কেন?
কী করবো বউ, আমার তো কোন শালী নাই। আমার বন্ধু রাতুল,ও প্রায়ই শালী নিয়ে বেড়াতে যায়।দেখে আমার কী যে ভালো লাগে! আমারও বউয়ের চেয়ে শালী বেশি পছন্দ!!
এই কথা শুনেই বউ গাট্রি বোচকা বেঁধে চলে গেছে!
বউ নাই, তাই আরামসে ফেসবুক চালাচ্ছি। রিয়াদ এসে হাজির। এই ব্যাটা আমার ছোটবেলার বন্ধু। ওকে দেখলেই মনে হয়, এক বোতল ভিটামিন ঔষধ কিনে দেই।শালা এমন চিকনের চিকন, মশা দেখলেও ভাবে,আমি ওর রক্ত খাবো, নাকি দেবো!!
ওকে দেখলেই মেয়েরা মজা নেয় । তালপাতার সেপাই বলে ক্ষেপায়। আমি একদিন বললাম, কী রে রিয়াদ,তুই তো শুকিয়ে শুটকি হয়ে সবার কাছে হাসির পাত্র হয়ে যাচ্ছিস!
রিয়াদ আমার হাত ধরে বললো, দোস্ত, তিন বাচ্চার মা হলেও আপত্তি নাই,কিন্তু হাসির পাত্র হতে বলিস না!
পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, ওদের বাড়ির পাশে ভাড়াটিয়া হয়ে একটা অসম্ভব মোটা মেয়ে এসেছে,ওর নাম হাসি!!
রিয়াদ আমার পাশে এসে বসলো।আমি বললাম, কী রে রিয়াদ, ঘটনা কী? এই সকাল সকাল আমার এখানে?
রিয়াদ বললো, দোস্ত, অসম্ভব একটা খুশির খবর আছে। কাল আমরা বউ দেখতে যাচ্ছি?
রিয়াদ খুশি খুশি গলায় বললো, কার আবার! আমার!!
তুই বিয়ে করলি কবে রে শালা?
দূুর দোস্ত, আমার GF আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে। তিন মাস ধরে ফেসবুকে আমাদের প্রেম চলছে।
এখন কথায় কথায় GF, BF শুনি। এই GF এবং BF নিয়ে আগে আমার একটা ভুল ধারনা ছিল। আমি মনে করতাম, GF মানে হচ্ছে - Garments Factory আর BF মানে হচ্ছে _ Biscuit Factory!
রিয়াদ আমাকে সত্যি অবাক করলো। আমি বললাম, বলিস কী রে! তোর মতো চিকন পাটের দড়িকে কোন মেয়ে বিয়ে করবে,এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
দোস্ত কাল বিকেলে আমরা তাহলে যাচ্ছি।
বিকেলে যাওয়া ঠিক হবে না। সকালে যাবো।
কেন দোস্ত, বিকেলে যাওয়া ঠিক হবে না কেন?
আরে শালা, সকালে বিউটি পার্লার বন্ধ থাকে। আসল চেহারা দেখবো। বিকেলে গেলে তো বিউটি পার্লার থেকে সেজে আসবে,তখন আটা ময়দা দেখবো নাকি!
মোবাইল দে তো। ঐ মেয়ের সাথে কথাটথা বলি। দেখি, মেয়ে কী বলে। মেয়ের নাম কি?
মাশাল্লাহ! মারহাবা! ভালো মেয়ে জুটিয়েছিস! একেবারে ডানাকাটা পরী!!
রিয়াদ মোবাইল এগিয়ে দিল। আমি ডানাকাটা পরীকে মেসেজ দিলাম। হ্যালো, ডানাকাটা পরী,আমি রিয়াদের বন্ধু।আগামীকাল সকালে তোমাদের বাসায় আসছি।
উত্তর এলো, ভাইয়া, ওকে বলি নাই,আপনাকে বলছি। আমি আসলে বিবাহিত!
আমি লিখলাম, তিন মাস প্রেম করলে,এখন বলছো,তুমি বিবাহিত?
আমি রিয়াদের দিকে তাকালাম,রিয়াদ বললো, দোস্ত, ডিভোর্সি আমার আপত্তি নাই! প্রেম করছি না!!
আমি লিখলাম, ওকে, তুমি ডিভোর্সি, এতে সমস্যা নাই,আমরা রাজি।
ভাইয়া, আমার কিন্তু দুইটা বেবি আছে!
আমি হতাশ হয়ে রিয়াদের দিকে তাকালাম। রিয়াদ কিছুক্ষণ মুখ কালো করে থেকে বললো, দোস্ত, আমি ডানাকাটা পরীকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। যে কোন কিছুর বিনিময়ে ওকে বিয়ে করবো। দুই বাচ্চার মা হলেও আমার আপত্তি নাই। ভালবাসা বলে কথা!
আমি লিখলাম, ওকে বোন। আমাদের আপত্তি নাই।
কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই এলো, ভাইয়া, আমি আপনার বোন হই না, ভাই হই! আমি আসলে মেয়ে নই, ছেলে!!
আমি রিয়াদের দিকে তাকিয়ে দেখি,বেচারা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে!!
আমি রিয়াদের চোখেমুখে পানি দেওয়ার জন্য বাথরুমে দৌড় দিতেই সামনে বউ এসে হাজির!
আমি বললাম, ঘটনা কী বউ? তুমি না রাগ করে চলে গেলে??
বউ বললো, চলেই তো গিয়েছিলাম!
বউ হতাশ গলায় বললো, তোমার উপর রাগ করে তো বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলাম। রাগের মাথায় একটা চলন্ত গাড়িতে গিয়ে উঠালাম। কিছুদূর যাওয়ার পরই মনে হলো, আরে শালা, আমি কই যাই, আমার জামাই তো আমার বাড়িতেই ঘরজামাই থাকে? আমি যাবো কেন, বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলে ঐ শালা যাবে!
এইবার আমি মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম!!