আনুশকার মৃত্যুর পর লেখালেখি শুরু হয়েছে যৌনতা ও যৌন উপকরণ নিয়ে। কথা হচ্ছে যৌন ফ্যান্টাসি নিয়ে। মানব ইতিহাস আর যৌনতা একটি আরেকটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শুধু মানুষ কেন যে কোন প্রানের বিকাশের অন্যতম উপাদান যৌন প্রজনন, যদিও অযৌন প্রজননও রয়েছে। যৌনতার মূল উদ্দেশ্য হলো প্রজাতির বিকাশ আর যৌনতার যে আনন্দ সেটি প্রজননকে উতসাহিত করবার উপাদান মাত্র কিন্তু মানুষের সংকট হলো মানুষ যৌনতার প্রোডাক্ট নয় মেতে থাকে বাই প্রোডাক্ট আনন্দ নিয়ে।
বাতসায়নের কামসূত্রকে এখনো বিভিন্ন যৌনতা সম্পর্কিত কলাকৌশল এবং উপাদানের একটি অন্যতম টেক্সট হিসেবে দেখা হয়। এটি পাঠ করে আমার কাছে আনহেলদি বলে কিছু মনে হয়নি বরং বাতসায়ন রোমান্টিসিজমের ভেতর দিয়ে যৌনতাকে উন্নীত করেছেন একটি শিল্পে।
শত শত বছরের হেরেমের ইতিহাস যদি বিবেচনায় আনি তবে আমরা দেখবো হেরেমের অন্যতম উপাদান যৌনতা হয়ে উঠেছিলো রাজ্য পরিচালনার অন্যতম অনুষঙ্গ। হেরেমে একেকটি নারীকে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ালেখা করতে হতো এবং বহু কৌশল শিখতে হতো যৌন শিক্ষার পাশাপাশি। সম্রাটরা যখন যুদ্ধ যাত্রা করতেন তখন এই হেরেমকেও তারা স্থানান্তরিত করতেন যুদ্ধ শিবিরে।
যৌনতা অতীতেও ফ্যান্টাসি ছিলো, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। যত বাঁধা বিপত্তি আসুক লুকিয়ে চুরিয়ে যৌনতাকে উপভোগ করা মানুষের স্বভাবের অংশে পরিণত হয়েছে। এমনকি যারা পেপার পত্রিকা বা মিডিয়াতে যৌনতা বিরোধী উপদেশ দিচ্ছেন তাঁদের নিয়ে ঘাটলেও থলের বেড়াল ঠিকই বেড়িয়ে আসবে।
কিন্তু সমস্যা হয়েছে ঢাকা শহরের হাজার হাজার দিহান আনুশকার ভেতর একজন দিহান ও একজন আনুশকা একটি দূর্ঘটনার শিকার হয়ে। আমি বলবো দূর্ঘটনা নয় এটি একটি পরিণতি। আমাদের একপুরুষ আগে যারা দেশের প্রান্তিক জায়গা থেকে হঠাত করে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে বিভিন্ন উপায়ে তাঁদের পরিবারে এই সংকট এখন প্রকট।
মফস্বলীয় শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে উঠে এসে ঢাকায় তারা আধুনিক হবার চেষ্টা করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন। তারা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের তকমা লাগিয়ে ফ্রি সেক্স, লিভ টুগেদার এবং বিভিন্ন পদের যৌন স্বাধীনতাকে ব্যক্তিগত অর্জন ভাবতে থাকেন এর পরিণতির কথা না ভেবেই। এরা ছেলেমেয়েদের কাছে টাকা ও গাড়ির চাবি দিয়েই ভেবে নেয় তাঁদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেল।
আমরা শৈশব থেকে যৌনতা বিষয়ে ভুল ও বিকৃত ধারণা নিয়ে বড় হই এবং এই ভুল থেকে শিখতে শিখতে জীবনে বহুকিছু ঘটে যায়। কেউ সেই ভুল শেয়ার করতে পারে আর কেউ পারে না। যারা শেয়ার করতে পারে তারা হাল্কা হয় আর যারা পারে না তারা আজীবন ট্রমা বয়ে বেড়ায়।
আমাকে অনেকে ফোন দেয় বলে ভাই আগের মতন যৌন সক্ষমতা নেই। আপনার ভাবী অসন্তুষ্ট। আমি বলি আটচল্লিশে এসে আটাশের পারফরমেন্স তো আপনি আশা করতে পারে না। যৌনতা অন্যান্য প্রক্রিয়ার মতন একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। মানুষের চুলে পাক ধরবে এটি যেমন সত্য তেমনি যৌন ক্ষমতা ক্রমশ কমে আসবে এটিও তেমনি সত্যি কিন্তু আমরা বেশীরভাগ নারী পুরুষ এটি মেনে নিতে পারি না। যারা পারি না যৌনতা তাঁদের কাছে ফ্যান্টাসি, জীবনভর এক অনাবিষ্কৃত মহাদেশ।
১৩.০১.২০২১
খোশমহল, কলেজ রোড, জামালপুর।