উপদেষ্টাদের বৈঠকে আলোচনায় বন্যার ‘নেপথ্যের কারণ’
মুক্তমন ডেস্ক : বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির ‘নেপথ্যের কারণ’ কী, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের বন্যা মোকাবিলায় করণীয় কী হতে পারে, বৈঠকে সে বিষয়েও আলোকপাত করেছেন উপদেষ্টারা।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বৈঠকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বৈঠকে তারা দেশের বন্যা পরিস্থিতি, বন্যাদুর্গতদের জন্য সরকার কী করতে পারে এবং কীভাবে সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া বন্যার পেছনে কারণ কী এবং ভবিষ্যতে বন্যা মোকাবিলায় সরকার কী করতে পারে আলোচনায় সেসব বিষয়ও অত্যন্ত গুরুত্ব পায়।
বন্যাদুর্গতদের দুর্দশা লাঘবে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বন্যাকবলিত সব এলাকা পরিদর্শন করবেন বলেও জানান এ উপদেষ্টা।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ত্রাণ কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম) বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ফেনী যাচ্ছেন। অধিকাংশ বন্যাকবলিত এলাকায় পৌঁছে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয় করবেন তিনি।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের আকস্মিক বন্যায় আগাম সতর্কবার্তা পাওয়ার সুযোগ খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টা আজ ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বন্যার্তদের পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত উপদেষ্টারা আলোচনা চালিয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা বিপ্লবে হতাহতদের পরিবারের সেবায় একটি ফাউন্ডেশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। এতে প্রধান থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা ফাউন্ডেশনের সদস্য হবেন। ফাউন্ডেশনের কাজ হবে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং বিপ্লবের স্মৃতি ধরে রাখা। যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জানতে পারে আন্দোলনের সময় কী ঘটেছিল। ফাউন্ডেশনটি হবে একটি আইনি সত্তা।
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, জনগণের অর্থ দিয়ে গড়ে ওঠা যে কোনো কাঠামো বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণের বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরির বিষয়েও তারা বৈঠকে আলোচনা করেছেন। এটি একটি আইনি কাঠামোর আওতায় আনা হবে, যেন কোনো কাঠামোর নামকরণ জনগণের প্রত্যাশাকে প্রতিফলিত করে এবং এটি ফ্যাসিবাদের পক্ষে না যায়।
তিনি বলেন, আমরা নীতিগতভাবে বলপূর্বক গুমের বিষয়ে একটি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি এসব ঘটনার তদন্ত করবে।
এ উপদেষ্টা বলেন, বিপ্লবের সময় সহিংসতা ও অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অন্য উপদেষ্টা ও আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবেন। তাদের কর্মকাণ্ডে যেন জনজীবন ব্যাহত না হয় সেজন্য অনেকেই যে দাবিগুলো উত্থাপন করে আসছেন সেগুলো সমাধানের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
বিদেশি মাছ ধরার যানবাহন যেন মাছ ধরতে দেশের সামুদ্রিক অঞ্চলে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর উপদেষ্টারা বৈঠকে জোর দেন বলেও জানান রিজওয়ানা হাসান।
এসময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।
এ উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতা বিপ্লবের সময় যেভাবে বাঁধন খুলে এগিয়ে গিয়েছিল, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও সেভাবে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আমরা লক্ষ্য করেছি উজান থেকে আসা পানি বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশে আগাম বন্যা সতর্কবার্তা না পাঠিয়ে সেখানে একটি বাঁধ খুলে ভারত তার অমানবিক মনোভাব দেখিয়েছে।
ব্রিফিংয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।