অর্থ-বাণিজ্য

ছয় মাসে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ

অর্থনৈতিক রিপোর্টারঃ চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে প্রায় দু’বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় বাড়লেও বিদেশি মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে ঋণের দায় মেটাতেই।

রবিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে বিদেশি ঋণের এ তথ্য পাওয়া যায়।

দেশের অর্থনীতির সঙ্কট প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ডলার সঙ্কটে সব দিকেই চাপে রয়েছে সরকার। পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা থেকে শুরু করে সব সূচকই কমছে ডলারের অভাবে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও দু’বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধসহ ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর শেষে বিভিন্ন প্রকল্পে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার। অথচ আগের বছরের একই সময়ে অর্থছাড় হয় ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অর্থছাড় কমেছে ১৩ শতাংশ।
ইআরডির তথ্য বলছে, দেশে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থছাড় হয়েছে ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার। একই সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পে আগে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৯৮ কোটি ১৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ এ ছয় মাসে যত ঋণের অর্থছাড় করিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে তার ৫৬ দশমিক ২৪ শতাংশই আগে নেওয়া ঋণ পরিশোধে গিয়েছে।

এ সময়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৯৮ কোটি ১৭ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ২৩ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে শুধু সুদ বাবদই পরিশোধ হয়েছে ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিকসঙ্কট গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। এর মধ্যে রিজার্ভসঙ্কট সবচেয়ে বেশি। রিজার্ভসঙ্কটের কারণে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে উৎপাদন খাতেও। তবে গত ছয় মাসে দেশের রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে বিদেশি মুদ্রার প্রবাহ বেশি থাকলেও তার অধিকাংশই চলে যায় এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিটের (আকু) বিল পরিশোধ ও প্রকল্পে নেওয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধে।
ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশের সঙ্কটময় সময়ে সবচেয়ে বেশি ঋণের অর্থছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এ সংস্থাটির অর্থছাড় হয়েছে ১০৫ কোটি ডলারের বেশি। এটি চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক, সংস্থাটি এ সময়ে ৮০ কোটি ডলার।

প্রতিশ্রুতিও কমে গেছে প্রকল্পগুলোতে। ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য উন্নয়ন সংস্থাগুলোর অর্থছাড় হয়েছে ২২৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ৬৯৮ কোটি ডলারের বেশি।

করোনার অভিঘাতের পর থেকে সরকারের সব ধরনের ব্যয়ে সাশ্রয়ী নীতি নেওয়া হয়। এ কারণে প্রায় তিন বছর ধরেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তেমন গতি নেই। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বাস্তবায়নাধীন সব প্রকল্প পর্যালোচনা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রকল্প বাদ দেওয়া হচ্ছে। আবার কিছু প্রকল্পের পরিচালক পালিয়ে গেছেন। সরকার পতনের আন্দোলনে অবরোধসহ রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ বন্ধ ছিল।

এমন বাস্তবতায় জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে এডিপির বাস্তবায়ন এক রকম স্থবির হয়ে পড়ে। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বিভিন্ন ব্যয় কম হয়েছে ১১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। অবশ্য একক মাসের হিসাবে গত ডিসেম্বরে আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ব্যয় ৯০৬ কোটি টাকা বেশি হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button