ছাত্রশিবিরের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি

স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি)। ‘মেধা ও সততায় গড়ব সবার বাংলাদেশ’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির কথা জানান শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। এসময় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- কেন্দ্রের উদ্যোগে অদম্য মেধাবী সংবর্ধনা ও প্রদর্শনী ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাবির বটতলা; শাখা পর্যায়ে বর্ণাঢ্য র্যালি (ঢাকার র্যালি ৭ ফেব্রুয়ারি); অদম্য মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান; সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও এতিম ছাত্রদের নিয়ে প্রীতিভোজ; ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান; সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান/কালচারাল ফেস্ট আয়োজন; কুইজ, বিতর্ক, বক্তৃতা, ক্রীড়া, শর্ট ফিল্ম ও ক্যালিওগ্রাফি প্রতিযোগিতা আয়োজন; ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প, ব্লাড গ্রুপিং ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি; শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ববরণকারী পরিবারের সাথে প্রীতিভোজ ও শহীদদের জন্য দোয়া; দাওয়াতি মেসেজ, গান, নাটক, শর্ট ফিল্ম ও ডকুমেন্টারি প্রভৃতি তৈরি ও প্রচার; বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়; বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাস শাখাসমূহে ডিপার্টমেন্টভিত্তিক পজিশনধারীদের সংবর্ধনা; জুলাই অভ্যুত্থানের ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং আলোচনা সভা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নীতিহীন ছাত্ররাজনীতি, দিশেহারা তরুণ সমাজ ও বিপথগামী শিক্ষাব্যবস্থার সংকটময় প্রেক্ষাপটে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের সংকল্প নিয়ে ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের ইসলামী ছাত্রশিবির। সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব তৈরির ভিশন নিয়ে আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে শুরু হওয়া এই সংগঠন আজ ছাত্র-জনতার আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
শিবির সভাপতি বলেন, ছাত্রশিবির মেধাবী ছাত্রদের প্রিয় ঠিকানা। ছাত্রশিবির এক দৃঢ়সংকল্পিত আন্দোলনের নাম। ছাত্রশিবিরের বিরোধীরাও শিবিরের সততা, নৈতিকতা, দেশপ্রেম, আমানতদারিতা ও মেধার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য। এখানে চর্চা হয় মেধা, মননশীলতা, আর মূল্যবোধের। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক, ধর্ষণ ও অশ্লীলতার বিপরীতে ছাত্রশিবিরের গঠনমূলক কার্যক্রমে ছাত্রসমাজ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করছে। ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ছাত্রকল্যাণ, সমাজকল্যাণ, শিক্ষা সংস্কার, ছাত্র অধিকার, ক্যারিয়ার গঠন ও দক্ষতা উন্নয়ন, মেধা ও নৈতিকতার বিকাশ, সুস্থ সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ চর্চা এবং জাতীয় সংকট নিরসন আন্দোলনসহ দেশ ও জাতি গঠনে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালে এসে প্রিয় জন্মভূমিকে বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার সংগ্রামে আরও একবার নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ ছাত্রশিবির। ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে ছাত্রশিবির ইতোমধ্যেই দেশবাসীর আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছে। তবে চূড়ান্ত বিজয় এখনও সূচিত হয়নি, পাড়ি দিতে হবে এক সুদীর্ঘ পথ। সেই বিজয় নিশ্চিত করতে হলে মেধা ও সততার সমন্বয় প্রয়োজন। প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম, অবিচল প্রতিজ্ঞা। লক্ষ্য আমাদের একটিই—শান্তি, সম্প্রীতি ও ইনসাফের নতুন বাংলাদেশ। সে দেশ হবে আপনার, আমার, প্রত্যেকের। আমাদের সবার বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, আমাদের সামনে দেশ ও জাতি গড়ার যে সুবর্ণ সুযোগ এসেছে, তা যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে দিতে- আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের স্বপ্ন, শহীদ, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ভাইদের প্রত্যাশার আলোকে একদল যোগ্যতাসম্পন্ন লোক তৈরি করা যারা বৈষম্যহীন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে। সেই প্রত্যাশায় ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৯ দফা-সংবলিত আহ্বান পেশ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সেগুলো হচ্ছে-শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাধীন শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। জুলাই গণহত্যা, ২৮ অক্টোবর, পিলখানা ও শাপলা চত্বরসহ সকল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচারকার্য দ্রুত শেষ করতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান এবং আহতের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে এবং সকল ধরনের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিগত ১৫ বছরে দায়েরকৃত সকল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার ও রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় সকল রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।