অন্যান্যরাজনীতি

পতিত আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট কেরানীগঞ্জবাসী

আশা আক্তার:রাজধানীর পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের চলছে বেপোরোয়া চাঁদাবাজি। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তখন তাদের সাথে ছিল তাদের মহরম দহরম সম্পর্ক। এখন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীদের সাথে ছবি তুলেই নিজেকে দাবি করছেন বিএনপি সক্রিয় সদস্য।
জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পর নিজেদের বিএনপি দাবি করে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কেরানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন দফতর, হাট, ঘাট, মাঠ , ভূমি অফিস, সাব রেজিস্ট্রার অফিস, গ্যাস অফিস, বিআরটিএ অফিস, বিদ্যুৎ অফিসসহ বাদ নেই কোন স্থান। নামে বেনাম তালিকা তৈরি করে মাসিক ভিত্তিতে এই সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি করছে। গোপনে ও প্রকাশ্যে এই চাঁদাবাজদের কর্মকাণ্ড চললেও প্রশাসন রয়েছে নিরব ভূমিকায়। এদের নির্যাতন ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ কেরানীগঞ্জবাসি। প্রতিকার পেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।

এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা, ১) মজিবর রহমান, ২) শেখ শামীম ৩) আব্দুল গনি, ৪) শামসুল ইসলাম সনেটসহ ২০ থেকে ২৫ জন।

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পলাতক রাজনৈতিক উপজেলা চেয়ারম্যান ও মন্ত্রীর সাথে নিয়মিত চলছে তাদের দহরম মহরম যোগাযোগ। এর আরালেবিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের পরিচয় ব্যবহার করে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে বেপরোয়া ভাবে চাঁদাবাজিতে নেমেছে এই সিন্ডিকেটটি। সাদা মাইক্রোবাসে বিভিন্ন মিডিয়ার স্টিকার ব্যবহার করে, বিভিন্ন কারখানা, গোডাউনে প্রবেশ করে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ‌ চাঁদাবাজ এই সিন্ডিকেটের একেকজনের রয়েছে একাধিক বহুতল ভবন। বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনের কার্ড গলায় ঝুলিয়ে ভুয়া পরিচয় এদের রয়েছে একাধিক সোর্স। মান সম্মান ও ইজ্জতের কারণে অনেকেই মুখ খুলছেন না।

এদের ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে খোঁজখবর নিলে পাওয়া যায় পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সাথে এদের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। শামসুল ইসলাম সনেট, মজিবর রহমান,
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিচ্ছেন তার প্রমাণও আসে এই প্রতিবেদকের কাছে। অনুসন্ধানে উঠে আসে শামসুল ইসলাম সনেটর আসল নাম মোতায়েন হোসেন, স্থায়ী ঠিকানা সিরাজগঞ্জ, বর্তমানে থাকেন কেরানীগঞ্জ নতুন সোনাকান্দা এলাকায়। এ এলাকায় হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে ছিলেন দীর্ঘ বছর। কিছুদিন ডেসটিনি লিমিটেড কোম্পানির কথা বলে অনেক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতে নিয়ে পালিয়ে যায় এই মোতাবেক। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে ফিরে এসে চালায় মানুষের উপরে নির্যাতন। ২ লক্ষ টাকা খরচ করে বেসরকারি টেলিভিশন মাই টিভির কার্ড সংগ্রহ করে এলাকায় মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে দীর্ঘ সময় করেছে চাঁদাবাজি।

মজিবুর রহমানের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক শিক্ষার্থী হত্যার মামলার আসামি এই মুজিবুর রহমান। শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই ফাইভ পাশও। ভুয়া ও নকল দলিল তৈরি করে অন্যের জমি দখল করতে গিয়ে এসিল্যান্ডের অফিসে ধরা খেয়ে দীর্ঘ সময় জেল খাটতে হয় তাকে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে হয়ে গেছে সাংবাদিক। টাকা খরচ করে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের আনন্দ টিভির কার্ড কিনে সাংবাদিক বনে গিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি।

জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আগে এই গণি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য সন্ত্রাসী। শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে, কেরানীগঞ্জের গদারবাগ এলাকায় গড়ে তুলেছে চারতলা ভবন। বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীদের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচার করে নিজেকে এখন দাবি করছেন বিএনপি’র সমর্থিত ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে চলছে ২০ থেকে ২৫ জনের এক চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট।

প্রকাশ্যে কেরানীগঞ্জের আনাচে-কানাচে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে শেখ শামীম নামের আরেক স্বৈরাচারের দোসর। রয়েছে তার ভুরি ভুরি প্রমাণ, যখন যেই দল ক্ষমতায় আসার পথে থাকে তখনই এই শামীম সেই দলের লোক দাবি করে, নিজেকে প্রমান করে। সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে কেরানীগঞ্জের আনাচে-কানাচে চাঁদাবাজি করে গড়ে তুলেছে ছয় তলা ভবন। দেখতে বিশাল শরীরের অধিকারী এই ব্যক্তির অপরাধের কথা কেউ তুলে ধরলেই তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে বেড়ায়। এদের যন্ত্রণায় নির্যাতনে অতিষ্ঠ কেরানীগঞ্জবাসী। প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় এরা দিন দিন হয়ে উঠছে গডফাদার মিডিয়া মাফিয়া।

সানি আহমেদ নামে কেরানীগঞ্জের এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, কেরানীগঞ্জের রতনের খামার এলাকায় তাদের বাড়ির ঘর ভেঙে তছনছ করে দেয় আওয়ামী লীগের কিছু সন্ত্রাসী, তাদের সাথে যোগ সাজেশন রয়েছে। প্রেসক্লাবের সভাপতি পরিচয় প্রদান করা, আব্দুল গনি, মজিবর রহমান, শেখ শামীম, শামসুল ইসলাম সহ ২০ থেকে ২৫ জন সিন্ডিকেট। নামধারী এই মিডিয়াস মাফিয়া দের সহযোগিতায় তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তারা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরঞ্চ আমাদের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তাদের কে না দেয়ায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের কে দিয়ে আবারও হামলা চালায়। এখন এই নিরীহ পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

কেরানীগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনের কাছে, এই সিন্ডিকেট বিভিন্ন নামে পরিচিত, কোথাও আওয়ামী লীগ নেতা কোথাও বিএনপি নেতা কোথাও বা সাংবাদিক। তাই প্রশাসনও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। চিন্তিত মিডিয়া ব্যকূ পরিচয় প্রদান করা এই চাঁদাবাজদের। আইনের আওতায় আনার দাবি কেরানীগঞ্জ বাসির।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button