জাতীয়

পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীদের প্রাণের উৎসব

নিউজ ডেস্ক:বাঙালির জীবনে পহেলা বৈশাখ শুধুই একটি তারিখ নয়—এটি এক অনুভব, এক আবেগ, এক আত্মিক সংযোগ। বাংলা বছরের প্রথম দিন, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ, আমাদের জাতিসত্তা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। এটি এমন একদিন, যেদিন বাঙালি তার শেকড়কে গভীরভাবে স্মরণ করে, আপন ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় এবং ভবিষ্যতের পথে নতুন করে যাত্রা শুরু করে।

এই উৎসবের পেছনে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। মুঘল সম্রাট আকবর যখন বাংলা অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার আনেন, তখন থেকেই বাংলা সনের প্রচলন হয়। এই বর্ষপঞ্জি অনুসারে কৃষকদের থেকে খাজনা আদায় করা হতো ফসল তোলার পর। সেই থেকেই পহেলা বৈশাখ হয়ে ওঠে ব্যবসায়ীদের জন্য হিসাব-নিকাশের নতুন বছরের সূচনা। আজও “হালখাতা” নামক ঐতিহ্যবাহী আয়োজন তারই ধারাবাহিকতা বহন করে।

পহেলা বৈশাখ এখন আর কেবল হিসাবের দিন নয়, এটি হয়ে উঠেছে সার্বজনীন এক আনন্দোৎসব। ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সবাই এই দিনে একত্রিত হয়, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গেয়ে ওঠে জীবনের গান। শহরের রাস্তায় হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা, যেখানে রঙ-বেরঙের মুখোশ, নানা রকম গ্রামীণ প্রতীক এবং শিল্পকলার অনন্য রূপ ফুটে ওঠে। এই শোভাযাত্রা ২০১৬ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক “বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে, যা নিঃসন্দেহে বাঙালির জন্য এক গৌরবের বিষয়।

এই দিনে ছায়ানটের আয়োজনে রমনা বটমূলে অনুষ্ঠিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান যেন বাঙালির সংগীত ও কাব্যপ্রেমের এক নিবেদন। গ্রামে-গঞ্জে বসে বৈশাখী মেলা, যেখানে গ্রামীণ পণ্যের পসরা, লোকজ গান, পুতুলনাচ, নাগরদোলা—সব মিলিয়ে এক অপূর্ব প্রাণের উৎসব। এটি শুধুমাত্র বিনোদনের আয়োজন নয়, বরং আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তবে প্রশ্ন হচ্ছে—এই ঐতিহ্যকে আমরা কতটা ধরে রাখতে পারছি? আজকের ডিজিটাল যুগে, বিশ্বায়নের (গ্লোবালাইজেশন) হাওয়ায় আমাদের অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটছে। পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক সময় আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। তাই এই পহেলা বৈশাখে আমাদের চিন্তা করা উচিত—শুধু উৎসব পালন নয়, বরং এই ঐতিহ্য কীভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা যায়।

আমরা যদি আমাদের সন্তানদের শিখাতে পারি এই দিনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব, এর সাংস্কৃতিক তাৎপর্য এবং একতার বার্তা, তাহলেই সত্যিকার অর্থে পহেলা বৈশাখের মাহাত্ম্য পূর্ণতা পাবে।

এটা হোক আত্মশুদ্ধির দিন, হোক বাঙালির সম্মিলিত ঐক্যের দিন। নতুন বছরের এই প্রথম দিনে আমরা যেন পুরনো সব গ্লানি ঝেড়ে ফেলে, সত্য ও সুন্দরের পথে এগিয়ে যেতে পারি—এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button