রাজনীতি

জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কোন অপকর্ম করবেন না: জামায়াত আমির

স্টাফ রিপোর্টারঃ জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কোন অপকর্ম না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, আবু সাঈদের শাহাদাত ছিল এই আন্দোলনের বিশাল একটা টার্নিং পয়েন্ট। একটা গরীব পরিবারের ছেলে দুনিয়ায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলো। সে জেনেশুনে শহীদ হওয়ার জন্য ডানা মেলেছিল। তার পথ ধরে বাকি শহীদেরা বলেছিল-আবু সাঈদ আমাদের ভাই, যে শাহাদাতের সিড়িতে সে পা রেখেছে আমরাও সেই সিড়িতে পা রাখতে চাই। তাদের এই বক্তব্য প্রমাণ করে-জাতি কতটা নির্যাতিত, মজলুম ছিল।

জামায়াত আমির রাজনৈতিক দল ও সব অংশীজনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সেই শহীদেরা একটা বৈষম্যহীন-মানবিক সুন্দর বাংলাদেশ চেয়েছিল। দুর্নীতি-দু:শাসন মুক্ত বাংলাদেশ চেয়েছে। তারা চলে গেছে, আমানত আমাদের ঘাড়ে। তাদের রক্তের দিকে একটু তাকান। তরতাজা সেই শিশু, যুবক, নারী-পুরুষের দিকে তাকান। যারা জীবন দিয়েছে, তাদের দিকে তাকিয়ে বিপ্লবের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এমন কোন অপকর্ম কেউ করবেন না। যদি করেন, শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে। তাদের রক্ষের অপমান করা হবে। আর জীবিত শহীদ-যারা পঙ্গু হয়ে আছে তারা ভীষণ কষ্ট পাবে। মজলুম দেশবাসী অভিশাপ দেবে।

তিনি বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র উদ্যোগে চব্বিশের রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের তথ্য সম্বলিত “২য় স্বাধীনতার শহীদ যারা” শীর্ষক স্মারকের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, যুগান্তর সম্পাদক কবি আব্দুল হাই শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপা নেতা রাশেদ প্রধান, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা, শহীদ আলিফের পিতা গাজীউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

জুলাই বিপ্লবে শহীদদের নিয়ে স্মারক প্রকাশ প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, যে কাজ জামায়াত হাত দিয়েছে, এই কাজের দায়িত্ব সবার। আমরা এই কাজের কোন ক্রেডিট নিতে চাই না। আমরা শুধু একটা নৈতিক দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। আমাদের চেয়ে আরও সুন্দর করে এই কাজ করতে সরকারসহ অন্যদেরকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি। তাহলে আমাদের এই কাজটা স্বার্থক হবে। সেক্ষেত্রে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। তিনি বলেন, আসুন শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। একটি সাম্য-সৌন্দর্য্যের বাংলাদেশ, বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ, সর্বোপরি একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য এগিয়ে যাই।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কিছু ইতিহাস মানুষের জন্য হয় আনন্দের, কিছু হয় বিষাদের আর কিছু হয় গৌরবের। বিশেষ করে জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনে যারা জীবন দেন, অতীতেও এরকম যারা দিয়েছেন, সাতচল্লিশ, বায়ান্ন, একাত্তর এবং সর্বশেষ চব্বিশে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের ইতিহাস হচ্ছে গৌরবের ইতিহাস। শহীদ পরিবারগুলোর জন্য কান্নার ইতিহাস। দেশবাসীর জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের ইতিহাস। চব্বিশের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত এরকম একটা আয়োজন আমরা কেন কোন বিরোধীদল বা কোন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কল্পনাও করেনি।

তিনি বলেন, দেশ আমাদের সবার। কিন্তু দেশের পাহারাদারির দায়িত্ব সব নাগরিকের। এই কাজ কিছু লোক করে আর আর কিছু লোক অপকর্মে লিপ্ত হয়। অপকর্ম যারা করে তারা এটাকে পেশা হিসেবে বিবেচনা করে। একসময় তারা অধিকারের মত মনে করে। আর বাকি জনগণকে তারা তাদের প্রজা ভাবে। নিজেরা রাজা হয়ে বসে। কিন্তু গাছের গোড়ায় যখন ঝাঁকুনি দেয়া হয়, ওই ডালে ডালের রাজারা তখন উড়ে গিয়ে অন্য জায়গায় পড়ে যায়। কিন্তু ক্ষমতায় যখন থাকে তখন সদর্পে অনেক দাম্ভিকতা প্রকাশ করে। এসব দাম্ভিকদের আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। অতীতের এরকম ফ্যাসিস্ট যারা ছিল, তাদের নাম বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও কলঙ্কিত হয়ে আছে। একই পরিণতি সবার ভোগ করতে হযেছে। কিন্তু ইতিহাসের দুর্ভাগ্যজনক শিক্ষা হচ্ছে-ইতিহাসের করুণ পাঠ পড়ে কিন্তু ওখান থেকে শিক্ষা নেয় না।

জুলাই বিপ্লবে শহীদদের নিয়ে স্মারক প্রকাশ প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এখনও এই ইতিহাস, স্বারক রচনা পরিপূর্ণ করতে পারিনি। এ প্রক্রিয়া চলমান। সব পাঠক ও শহীদ পরিবারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যাদের নাম এখনো আসেনি তাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। ত্রটিগুলো ধরিয়ে দিবেন। অনলাইনের মাধ্যমে প্রধান সব ভাষায় এই ইতিহাস গোটা বিশ্বে তুলে ধরা হবে। যাতে বিশ্ববাসী আমাদের বীরদের কথা জানতে পারে, এবং তাদেরকেও উৎসাহিত করে।

দলীয় সূত্র জানায়, স্মারকটির জন্য ২৩ টি টিম সারাদেশে কাজ করে প্রায় ৭৩১ শহীদের পূর্ণাঙ্গ জীবনী এই স্মারকে সংকলন করতে সক্ষম হয়। এই কাজ চলমান আছে। সর্বশেষ শহীদ পর্যন্ত পরবর্তী সংকলনে যুক্ত হবে। জুলাই বিপ্লবের আদ্যপ্রান্ত জানার ক্ষেত্রে স্মারকটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button