জাতীয়

আ.লীগ আমলের আন্দোলন ফের সক্রিয় রেলওয়ের স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান সরকারের

স্টাফ রিপোর্টারঃ পেনশন, বিশ্রাম ও আনুতোষিক সুবিধাসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে আবারও কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। সোমবার রাত ১২টা থেকে সব ধরনের ট্রেন চালানো বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এর মধ্য দিয়ে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সময় স্থগিত হওয়া এই আন্দোলন ফের সক্রিয় হলো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতি সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান আমার দেশকে বলেন, গত ১৭ বছর ধরে মাইলেজসহ বিভিন্ন দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। এই সরকারের আমলেও দাবি আদায়ে তিনবার সময় বেঁধে দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের দাবি-দাওয়া মানছেন না। সেজন্য রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কোনো ট্রেন চলবে না।

রেলের রানিং স্টাফদের ‘পার্ট অব পে রানিং এলাউন্স (মাইলেজ)’ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক দেওয়ার দাবির বিষয়ে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ (লোকো মাস্টার, গার্ড, টিটিই)। কিন্তু সোমবার বিকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি জানিয়ে বলে জানান মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, সোমবার ঢাকায় রেলভবনে একটি সভা হলেও যোগ দেননি রানিং স্টাফরা। তাদের নির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলবে।
নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ে কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা সুবিধা দেওয়া হয়, যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে ওই মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করার কথা জানানো হয়।

এ ছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সঙ্গে পাওয়া ভাতা যোগ করার বিষয়টিও বাদ দেওয়া হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রানিং স্টাফরা। এই মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন তারা। কয়েক দফায় অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। তবে বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলসচিব, রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসেন। কিন্তু দাবি আর পূরণ হয়নি। ফলে আবারও তারা আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন।
রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির নেতারা বলছেন, কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬০ বছর ধরে চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে মাইলেজকে বেতন খাতের অংশ থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়।

কর্মসূচি প্রত্যাহার ও কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান

সন্ধ্যায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, রেলওয়ের রানিং স্টাফদের (চলমান ট্রেনে দায়িত্ব পালনকারী) মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেওয়ায় সারাদেশে রেল চলাচলে অচলাবস্থা ও চরম যাত্রী ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে। আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারপূর্বক রেলের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের সব কর্মকর্তা/কর্মচারীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো যাচ্ছে।

এতে বলা বয়, রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের দাবি-দাওয়া/চাহিদা পূরণে যথেষ্ট আন্তরিক ও সর্বোচ্চ সচেষ্ট উল্লেখ করে বলা হয়, মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের দাবি-দাওয়াগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পত্র যোগাযোগের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে তাদের রানিং এলাউন্স ৭৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। মাইলেজ এলাউন্স পাবার জন্য সর্বনিম্ন ৮ ঘণ্টা ও ১০০ মাইল দূরত্বের শর্তও শিথিল করা হয়েছে। রানিং স্টাফদের অন্যান্য দাবি আদায়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় যথেষ্ট আন্তরিক ও সচেষ্ট রয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান অব্যাহত রেখে ট্রেন পরিচালনা করাই রেলওয়ের মূল কাজ। সে লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের যে কোনো সমস্যা ও দাবি-দাওয়ার বিষয় সমাধানে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে। রানিং স্টাফদের দাবি-দাওয়া আদায়েও রেলপথ মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। এমতাবস্থায় যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি বিবেচনা করে পূর্ব ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে রানিং স্টাফগণ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান আমার দেশকে বলেন, আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button