জাতীয়

জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের আন্দোলনকারী সাধারন ছাত্র-জনতার নাম ব্যবহার করে উল্লেখিত “ফ্যাসিবাদের দোসর ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার” শীর্ষক স্মারকলিপির প্রতিবাদ

মুক্তমন ডেক্সঃ জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে।দেশের সর্বত্র সর্বস্তরের সর্বশ্রেণীর জনমানুষ নিজেদের জীবন বাজী রেখে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছে- কেউ সরাসরি রাস্তার আন্দোলনে, কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, কেউ আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, কেউ শুধুমাত্র মৌন সমর্থনের মাধ্যমে। সর্বোপরি ইতিহাসের এই বৃহৎ গণ অভ্যুত্থানের অংশ হতে আপামর জনগণ তাদের সর্বাত্মক ভূমিকা রেখেছে এবং রক্ত ও ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে, তা যেন বেহাত না হয় সেজন্য আমরা সকলেই বদ্ধপরিকর।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় যে জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের আন্দোলনকারী সাধারন ছাত্র-জনতার নাম ব্যবহার করে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভুল তথ্য দিয়ে একটি কুচক্রী মহল জুলাইয়ের স্পিরিটকে নস্যাৎ করে দেশে পুনরায় স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে সেই কুচক্রী মহলটি।এইপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেফারেন্স ইন্সটিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম) এর চীফ সাইন্টিফিক অফিসার মালা খানের অনিয়ম, জালিয়াতি, দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বিগত ৬ মাস ধরে বিআরআইসিএমের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও রিসার্চ ফেলোগণ আন্দোলন করে আসছে এবং বিষয়টি মন্ত্রনালয়ে তদন্তের আওতায় রয়েছে। সর্বস্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও রিসার্চ ফেলোগণের এই যৌক্তিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য মালা খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদেরকে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফ্যাসীবাদের দোসর ও নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হিসেবে ট্যাগ দিয়ে দেয়া হচ্ছে। গত ০৪-০২-২৫ তারিখের জুলাই আগস্ট গণ অভ্যুথানের আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্র জনতা নামে সে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছিল, সেই স্মারকলিপিতে উল্লেখিত বিআরআইসিএমের কর্মকর্তা রেদোয়ানুল ইসলাম, মোঃ আবু হাসান, মোঃ মনিরুজ্জামান, ওমর বিন হামজা, মিজানুর রহমান, নয়ন কুমার কুণ্ডু, মইনুল হুদা, জাবেদ বিন আহমেদ, মেহেদি হাসান টুটুল, মোক্তার হোসেন, তুষার কুমার, শাকিল সফিউল্লাহ, আসাদুজ্জামান তুষার ও মেহেক আহমেদ নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের কোন ধরণের কর্মী ছিলেন না। নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার জোরেই নিয়মতান্ত্রিক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই তারা চাকরী লাভ করেছেন। সুতরাং এইসব যৌক্তিক আন্দোলনকারীদের অবৈধ কর্মকর্তা হিসেবে আখ্যায়িত করা পুরোপুরি যুক্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা আমাদের নামে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আনীত ফ্যাসিবাদের দোসর ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী আখ্যা দেবার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট সরকার উৎখাত হলেও তাদের দোসররা এখনও রয়ে গেছে। আর এই সব দোসররাই তাদের ফ্যাসিস্ট রাজত্ব পুনরায় কায়েমের জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ৫ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর যেমন দেশের প্রায় সব সরকারী ,বেসরকারী, আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের উৎখাতে সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রচেষ্টা নিয়েছিলো, ঠিক তেমনি বিআরআইসিএমের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্যাসিস্টের দোসরকে উৎখাতের জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন। কিন্তু আজ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে সেই সব যৌক্তিক আন্দোলনকর্মীদের কেই ফ্যাসিস্টের দোসর আখ্যায়িত করে গ্রেফতার করার দাবী জানানো হয়। এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। আমরা উচ্চ কন্ঠে বলে যেতে চাই, এদেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের যেমন ঠাঁই হয়নি, তেমনি তার দোসদেরও ঠাঁই হবে না। ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে জুলাই- আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণকারীদের ও যৌক্তিক আন্দোলনকারীদেরকে মিথ্যাভাবে ফ্যাসিস্ট দোসর বানানোর অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে।
পরিশেষে, নিবেদন করছি, সঠিক ঘটনার যথাযথ অনুসন্ধান ও যাচাই পূর্বক ফ্যাসিবাদের দোসর ও তাদের সহায়তাকারী সন্ত্রাসীদের,সে দলেরই হোক না কেন, চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button