ফ্যাসিবাদের দোসর বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞানী পরিষদের সভাপতি মালা খানের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনকারী সাধারন ছাত্র-জনতা।

স্টাফ রিপোর্টারঃ ৫ ই আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার হাসিনা ও আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। জুলাইয়ের স্পিরিট ধারণ করে দেশের বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলের রেখে যাওয়া ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালিত হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ রেফারেন্স ইন্সটিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম) বিআরআইসিএমের সাধারণ বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও প্রতিষ্ঠানটির চীফ সায়েন্টিফিক অফিসার এবং পতিত ফ্যসিবাদের দোসর মালা খানের নানা অনিয়ম, জালিয়াতি, দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বিগত ছয় মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
কে এই মালা খান? মালা খান হচ্ছেন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ও সুবিধাভোগী একজন কর্মকর্তা যিনি পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও প্রশাসন এর বিভিন্ন প্রভাবশালী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় ও ছত্রছায়ায় চালিয়ে গেছেন দুর্নীতির মহোৎসব। আয়নাঘর খ্যাত এই দুর্নীতিবাজ নিয়ম বহির্ভূতভাবে দখল করে ছিলেন বিআরআইসিএম এর চীফ সায়েন্টিফিক ও মহাপরিচালকের পদ। তিনি পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের বিজ্ঞান মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের এতটাই আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে ৫ই আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে যখন পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী এমপিরা লুকিয়ে দেশ ত্যাগ করে তখন এই মালা খানই এ ফ্যাসিস্ট বিজ্ঞান মন্ত্রীকে বহুদিন লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে জানা যায়।
পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়কাল অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকেই শুরু হয় মালা খানের উত্থান। একটি অনুমোদনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (তথাকথিত আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি এর বাংলাদেশস্থ স্টাডি সেন্টার) থেকে ভুয়া পিএইচডি থাকা সত্ত্বেও তাকে দেওয়া হয় পদোন্নতি ও নিয়োগ। পরবর্তীতে তৎকালীন বিজ্ঞানীদের তীব্র প্রতিবাদ ও পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তাকে ইয়াফেস ওসমান, শেখ ফজলে নূর তাপস, নুরুল ইসলাম নাহিদ সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে থাকা ফ্যাসিস্ট দের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শাস্তির আওতায় না এনে নিয়ম লঙ্ঘন করে বানিয়ে দেওয়া হয় বিআরআইসিএম এর মহাপরিচালকের মতো পদ।
মহাপরিচালক পদে বসে মালা খান শুরু করেন নানা আর্থিক অনিয়ম, জালিয়াতি ও দুর্নীতি। ক্ষমতার গরমে ধরা কে সরা আন করা শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানে যারাই তার বিরুদ্ধাচারণ করত তাদেরকে করা হত হয়রানি ও মানসিক নির্যাতন এবং বাধ্য করা হত চাকরি ছেড়ে দেবার জন্য। দেশের মানুষের টাকায় গড়া প্রতিষ্ঠানকে মনে করতেন নিজের বাসা বাড়ি। নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং বিরুদ্ধচারীদের দমাতে গঠন করেছিলেন একটি লাঠিয়াল বাহিনী যারা তার নির্দেশে বিরুদ্ধবাদীদের ওপর চড়াও হয়ে করতেন নানা মানসিক নির্যাতন। এই সেই মালা খান যিনি ফ্যসিস্ট সরকারের মদদে এবং নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য হযেছিলেন একাধারে বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞানী পরিষদের সভাপতি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রিন্ট মিডিয়ায় তার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের অনেক সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। প্রায়ই ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী ও ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি অফিসেই করতেন নানা রকম আয়োজন। মন্ত্রিপুত্র ইশরার ওসমান এর সাথেও ছিল তার সখ্যতা। এইসব ফ্যাসিস্ট প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের সহায়তায় ও ষড়যন্ত্রে তিনি ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বাগিয়ে নিতেন অবাস্তব ও অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প যার মাধ্যমে লোপাট করা হত কোটি কোটি টাকা। মেট্রলজি প্রকল্পের আড়ালে গড়ে তুলেছেন পারিবারিক প্রকল্প। পরিবারের বিভন্ন সদস্যের নামে ঢাকার ধানমন্ডি, রাজাবাজার, সাভার সহ বিভিন্ন জায়গায় গড়েছেন ফ্ল্যাট, জমি সহ নানারকম সম্পদের পাহাড়।
ক্ষমতার দাপটে এতটাই অন্ধ হয়েছিলেন যে, জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমানোর জন্য মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপসের সাথে ষড়যন্ত্র করে কর্মচারীদের ভয়-ভীতির মাধ্যমে বিরত রেখেছেন আন্দোলনে অংশ নেয়া থেকে। শুধু তাই নয়, ৩০ শে জুলাই মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সাথে নিজ অফিস কক্ষে বসে মালা খান করেছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমানোর নীল নকশা। পরবর্তীতে ৮, ৯ ও ১০ আগস্ট নিজের কৃতকর্ম ঢাকার জন্য বিআরআইসিএমের সকল সিসিটিভি ফুটেজ ডিলিট করে দিয়েছেন এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব করেছেন।
৫ই আগস্ট পরবর্তীতে তার দুর্নীতি, জালিয়াতি আর অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলে বেরিয়ে আসে তার অনৈতিক কর্ম-কান্ডের বিষয়টিও যা পরবর্তীতে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে দেশব্যাপী এবং প্রতিষ্ঠানটির জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিস্ট দোসররা এখনও লুকিয়ে রয়েছে প্রশাসনের সর্বত্র। আর এই দোসররাই মালা খানের মত ফ্যাসিস্ট দের পুনর্বাসিত করার সুযোগ করে দিতে তদন্ত কার্যক্রম কে বিলম্বিত ও ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই সুযোগে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর, জালিয়াত, দুর্নীতিবাজ আয়নাঘরখ্যাত এই মালা খান বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন বা যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পতিত আওয়ামী লিগের একজন চিহ্নিত দোসর হয়েও এখন গিরগিটির মত রঙ পালটে ভিড়ে যেতে চাইছেন বৈষম্য বিরোধী প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার কাতারে। চালিয়ে যাচ্ছেন তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের প্রতি বিভিন্ন রকম নির্যাতন ও অপপ্রচার। দেখাচ্ছেন নানা রকম ভয়ভীতি ও হুমকি। এই ফ্যাসিস্ট দোসর তার অনৈতিক অর্থ সম্পদ ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের আন্দোলনকারীদের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে নানারকম ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করে যাচ্ছে।
ফ্যাসিবাদের দোসর মালা খানকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের আন্দোলনকারী সাধারন ছাত্র-জনতা।