বাজারে চাহিদা নেই ভারতীয় পেঁয়াজের, কমেছে চাল-মুরগির দাম

স্টাফ রিপোর্টারঃ বেশ কিছুদিন অস্থির থাকার পর সব ধরনের চাল, মুরগি ও ডিমের দাম কমেছে। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে। বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজার থেকে একরকম ‘উধাও’ হয়ে গেছে। দামও আগের তুলনায় কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা কমে বর্তমানে মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আলু ও শাকসবজিসহ কাঁচাবাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে বাজারে।
ব্যবসায়ীরা জানান, মাসখানেক আগেও ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে তা কমে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে নেই বললেই চলে। কোথাও পাওয়া গেলেও তা কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমতে পারে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বাজার থেকে উধাও হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি এবং দামও অনেক কম। তাই চাহিদা না থাকায় আমদানিকারকরাও ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করছেন না।
এদিকে মাসখানেক সময় ধরে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের যে সঙ্কট চলছিল, বর্তমানে সে সমস্যা কেটে গেছে। চলতি সপ্তাহে সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন। গত সোমবার পুরান ঢাকার নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা রাসেল মিয়া বলেন, কাঁচা তরিতরকারির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে কোনো সবজির দাম কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে এবং সপ্তাহের ব্যবধানে দাম আরও কমতে পারে। তার মতে, বাজারে শীতের তরিতরকারির সরবরাহ বাড়ায় দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা (মুদি) বিক্রেতা মা-বাবার দোয়া স্টোরের মালিক মো. সবুজ বলেন, বর্তমানে সব ধরনের সয়াবিন তেলের দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। গত সপ্তাহেও যেখানে দু-একটি ব্র্যান্ড ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া যেত না, এখন সব ব্যান্ডের তেল সরবরাহ স্বাভাবিক। দামও স্থিতিশীল রয়েছে। তবে তিনি জানান, গত কদিন ধরে সব ধরনের চালের দাম কিছুটা কমেছে। কেজিপ্রতি মিনিকেট জাতের চাল দাম প্রকারভেদে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত কমে বর্তমানে ৭৪ থেকে ৭৮ টাকায় এবং মোটা জাতের চাল মানভেদে ৪৯ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের চালের আড়তে গিয়ে জানা গেছে, মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে সব ধরনের চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর ৭ থেকে ১০ দিন ধরে দাম কমেছে।
এ বিষয়ে জনতা রাইস এজেন্সির মালিক হাজী আবু ওসমান বলেন, গত সপ্তাহ ধরে মোটা চালের দামে তেমন একটা হেরফের না হলেও মিনিকেট চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তিনি বলেন, বাইরে থেকে চালের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকার ইচ্ছা করলে চালের দাম আরও কমাতে পারে। সরকার বাইরে থেকে বেশি করে চাল আমদানি করলে মিল মালিকরা কারসাজি করার সুযোগ পাবে না। বর্তমানে মিল মালিকরা সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে যে কোনো সময় তারা সংকট তৈরি করে চালের বাজারে কারসাজি করতে পারে।
চালের দাম কমলেও আটার দামে কোনো হেরফের হয়নি। খোলা ও প্যাকেট আটার দাম মানভেদে কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই মাসে আটার দাম না কমলেও এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। সে হিসেবে এক বছরের মধ্যে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে আটার দাম কমেছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। একইসঙ্গে সরকার কয়েকটি পণ্য আমদানিতে শুল্ককর ছাড় দেওয়ার কারণে পণ্যের আমদানি বেড়েছে। এতে বাজারে সরবরাহ বাড়ছে, যা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
গড়ে ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে রয়েছে সবজির দাম। প্রকারভেদে প্রতিদিনই সবজির দাম কিছুটা কমছে। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে মানভেদে শিম বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে কমেছে নতুন আলুর দাম। গত সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা করে।
দেশি মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকলেও সব ধরনের মুরগির দামও কিছুটা কমেছে। গত সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে পাকিস্তানি মুরগি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির ডিমের দামও ডজনপ্রতি ৫ টাকা হারে কমেছে। সব মিলেই বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকায় ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।