জাতীয়

আইএসপিআরের বক্তব্য এলাকাবাসীর প্রত্যাখ্যান

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজারঃ কক্সবাজার পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের সমিতি পাড়ায় বিমান বাহিনীর সাথে স্থানীয় অধিবাসীদের সংঘর্ষের ঘটনায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) দেয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন কুতুবদিয়া পাড়া-সমিতি পাড়াবাসি। তাদের দাবি, আইএসপিআরের বিবৃতি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

একই সাথে যে সব মিডিয়ায় পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডবাসিকে ‘দৃর্বৃত্ত’ বলে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তা ক্ষমা চেয়ে প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়েছে।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জামায়াতে ইসলামির ১নং ওয়ার্ড শাখার আমীর মাওলানা ফুরকানুর রশিদ। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ১নং ওয়ার্ডের সভাপতি ও বিমান বাহিনীর নির্যাতনের শিকার জাহেদ হোসেনের বাবা সাবের আহমদ কোম্পানি, এযাবত উল্লাহ কুতুবী প্রমূখ।

জামায়াত নেতা মাওলানা ফুরকানুর রশিদ জানান, কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজলের সাথে বিমান বাহিনীর দাবিকৃত জমি নিয়ে পরামর্শ করার জন্য একটি মোটর সাইকেলে দুইজন ও আরেকটি ব্যাটারিচালিত টমটমে ৫ জন, মোট ৭ জন ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। বিমান বাহিনীর চেকপোষ্টে আসলে জাকের হোসেনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে পোষ্টের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। পেছনের টমটম আসার পর কী হয়েছে জানতে চাইলে বিমান বাহিনীর সদস্যরা জাহেদ হোসেনকে তারা নিয়ে যাবেন বলে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে মারধর করতে করতে বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যায়। ওই সময় অন্তত ৫০ জন বিমান সেনা তাদের ঘিরে ফেলে। দুইপাশের রাস্তাও আটকে দেয়।

তিনি দাবি করেন, অনেক সময় পরও জাহেদ হোসেনকে ছেড়ে না দেয়ায় এলাকার লোকজন আসতে চাইলে বিমান বাহিনী তাদের আটকে দেয়। বিমান বাহিনীর সদস্যদের হামলা করার কোন ভিডিও ফুটেজ কেউ দেখাতে পারবে না। বরং বিমান বাহিনী সদস্যরাই হায়েনার মতো এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়েছে।

তারা দাবি করেন, বিমান বাহিনীর গুলিতে শিহাব কবির নাহিদ নামের একজন নিহত ছাড়াও আরও একজনের লাশের সন্ধান মিলছে না। ওই লাশটি বিমান বাহিনী সদস্যরা রাস্তা থেকে কাঁধে তুলে নিয়ে গেছে।

এই সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, এলাকাবাসী ঘরে বিমান বাহিনীর তালা দেয়ার ঘটনায় বারবার জাহেদ হোসেনকে একা বিমান ঘাঁটিতে যাওয়ার জন্য ডাকছিল তারা। জাহেদ হোসেন লোকজন নিয়ে যাওয়ার কথা বললে বিমান বাহিনী উল্টো শাসিয়ে দেয়- বাড়াবাড়ি করলে একেবারে নাই করে দেয়া হবে।

এ বিষয়ে কথা বলতেই তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি লুৎফুর রহমান কাজলের কাছে যাচ্ছিলেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বিমান ঘাঁটিতে হামলার কথা ‘ডাহা মিথ্যা কথা’ দাবি করে বলা হয়, এদের আচরণ, এদের কথা-বার্তা, ধরে নেয়া দেখে মনে হচ্ছে- আওয়ামী দোসররাই এখনও এখানে (বিমান ঘাঁটি) আছে। তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে সরকারকে ঘায়েল করার জন্য এই রকম একটা ঘটনা ঘটিয়েছে। কারণ, আমাদের কাছ থেকে একজন সুস্থ লোক ধরে নিয়ে গেলো, ওখানে মারবে, আমরা কোন দেশে বসবাস করি। আমরা তো বার্মিজ না। আমরা ১ নম্বর ওর্য়াাডের জনগণ বাংলাদেশের জনগণ।

এতে বলা হয়, বিমান বাহিনী আমাদের তৈরি করা রাস্তাকে বিমান বাহিনীর দাবি করে ছোট্ট একটি সড়কে ৪টি চেকপোস্ট বসিয়েছে। এই চেকপোষ্টে এলাকাবাসিদের নানা ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

এই সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসি ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়াবাসির দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

এর আগে আইএসপিআরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কক্সবাজারে অবস্থিত বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার সংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্ত সোমবার (২৪-২-২০২৫) তারিখে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিয়াম স্কুলের পাশে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট হতে একজন স্থানীয় লোকের মটর সাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় বিমান বাহিনীর প্রভোস্ট কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় সমিতি পাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিকেরও বেশি স্থানীয় লোকজন বিমান বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমান বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বাঁধা দেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমান বাহিনীর সদস্য ও সমিতি পাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমান বাহিনীর সদস্যদের উপর ইট পাটকেল ছুড়ে। এসময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন যার মধ্যে বিমান বাহিনীর ৪ জন সদস্য (১ জন অফিসার ও ৩ জন বিমানসেনা) আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমান বাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button