বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে মানবজাতিকে পথ দেখাবে আল-কোরআন
জেলা প্রতিনিধি চট্টগ্রামঃ ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সব বিষয়ে ইসলামের সুষ্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ইসলামের পরিপূর্ণ সংবিধান মহান আল্লাহর বাণী পবিত্র আল-কোরআন। আমরা কোরআনের কিছু অংশ মানি আর কিছু অংশ মানি না। সেক্ষেত্রে কেউ অজ্ঞতা থেকে আর কেউ দুনিয়াবি স্বার্থে মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে কোরআনের নির্দেশনা পালন করা থেকে বিরত থাকি। এজন্যই পৃথিবীতে এতো অশান্তি আর বিশৃঙ্খলা। পদে পদে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। এর থেকে চিরস্থায়ী মুক্তি পেতে পবিত্র কোরআনের নির্দেশিত পথেই ফিরতে হবে মানবজাতিকে।
সোমবার চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের উদ্বোধনী দিবসে বক্তারা এসব মন্তব্য করেছেন। এর আগে, সন্ধ্যার ৬ টা ১৫ মিনিটে হাফেজ ক্বারী সিরাজ মোস্তাকিমের পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ তাফসির মাহফিল। এরপর পরে হামদে বারিতায়ালা পরিবেশনের পরপরই এ আয়োজনে শুরুতে বক্তব্য পেশ করেন ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার প্যারেড ময়দানে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করেছে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ। ৫ দিনব্যাপী এ মাহফিলে প্রধান মুফাচ্ছির হিসেবে মাহফিলের শেষদিন অংশ নেবেন জনপ্রিয় ইসলামী চিন্তাবিদ ড. মিজানুর রহমান আজহারী। জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহ আল আমিন প্রথমদিন তাফসির পেশ করবেন।
তিনি বলেন, ১৯৭৬ সাল থেকে প্রস্তুতি নিয়ে ১৯৭৮ সালে এ তাফসিরুর কোরআন মাহফিলের যাত্রা শুরু হয়। নানা বাঁধা বিপত্তি স্বত্তেও আমরা এ মাহফিলের কার্যক্রম চালিয়ে নিয়েছি। ২০০৯ সালে আমরা মাহফিলের আয়োজন করেছিলাম কিন্তু জরুরি অবস্থা জারি করে বন্ধ করে দেয়া হয়। দীর্ঘদিন পর আজ আমরা মাহফিলের আয়োজন করতে পেরেছি।
তাফসির মাহফিলের ইতিহাস তুলে ধরে চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আল্লামা সাঈদী ছিলেন এ মাহফিলের হৃদয়ের স্পন্দন। পাঁচ দিনব্যাপী এ মাহফিলে প্রতিদিন আড়াই ঘণ্টা করে তাফসির করতেন তিনি। চট্টগ্রামের যত কুসংস্কার, বেদাত ছিল সবকিছুর বিরুদ্ধে কোরআন হাদিসের আলোকে বক্তব্য রাখতেন আল্লামা সাঈদী।
জানা গেছে, এ মাহফিলে ৩০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে এ মাহফিলে। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের জন্যও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মূল প্যান্ডেলের বাইরে বিভিন্ন স্কুলের মাঠ, কমিউনিটি সেন্টারে পর্দার মাধ্যমে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তাফসির শোনার। ইতোমধ্যে ভারতের কলকাতা, ফেনী, নোয়াখালী, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আল্লামা সাঈদীভক্তরা মাহফিলে অংশ নিবেন।
যিনি দীর্ঘ ২৯ বছর একাধারে সেখানে তাফসীর মাহফিলে বয়ান করে গেছেন প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ প্রয়াত আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। ২০০৬ সালের ২০ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি প্যারেড ময়দানে সর্বশেষ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ঐতিহাসিক এই তাফসীর মাহফিলের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এরপর দুবছর সরকার এ মাহফিলের অনুমতি দেয়নি তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার তাফসির মাহফিল আয়োজনের চেষ্টা করে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ। ওই বছরের ২৯ মার্চ থেকে তাফসির মাহফিল আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু ওই দিন সরকারের নির্দেশে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) প্যারেড ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি করে। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় এই আয়োজন।