রাজনীতি

অসৎ,দূর্নীতিবাজ ও দলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নুরুল হক নুরের আহ্বান

মুক্তমন ডেস্ক : ছাত্র -জনতার গণঅভ্যুত্থানে গঠিত অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের প্রত্যাশা শীর্ষক আলোচনা সভা আজ মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ” সরকার পতন হলেও দেশের বিভিন্ন সেক্টরে আওয়ামিলীগের নিয়োগকৃত অসৎ,দূর্নীতিবাজ,চাঁদবাজ রয়েছে। দেশের বাহিরে বিভিন্ন দূতাবাস, হাইকমিশনেও এমন অনেক অসৎ লোক রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামিলীগ পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে দেশে অরাজকতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে , আগামী ১ মাস ছাত্র জনতাকে রাজপথে থেকে দেশকে পাহারা দিতে হবে। এখন বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে অনেকেই আন্দোলন করছে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে। তাদেরকে বলবো, আপনাদের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে কিন্তু এই সরকারকে একটু সময় দিন,দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক,আমরা কথা দিচ্ছি আপনাদের দাবি নিয়েও আমরা কথা বলবো,কিন্তু আপনারা আওয়ামিলীগের ফাঁদে পা দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে সহযোগিতা করবেন না।

ছাত্র জনতার জীবনের বিনিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে পেরেছি, কিন্তু ইতোমধ্যে দেখেছি আওয়ামিলীগের পরিবর্তে অনেকেই বিভিন্ন দূর্নীতিবাজদের সাথে হাত মিলাচ্ছে,দেশের বিভিন্ন জায়গায় দখলদারিত্ব চালাচ্ছে, চাঁদাবাজি করছে,আপনারা এসব বন্ধ করুন।বাংলাদেশে কোন চাঁদাবাজি,দখলদারিত্ব চলবে না।এক দখলদার হটিয়ে নতুন কোন দখলদার সৃষ্টি করতে চাই না। দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ভাংচুর চলছে এসব বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের কোথাও এসব চলবে না,একজন মানুষও যদি আক্রান্ত হোন আমাদের জানান,আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াবো।এই দেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ,এখানে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিবেন না,সব ধর্মের মানুষ এখানে সুন্দর ভাবে বসবাস করবে,সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

নুর আরও বলেন,দেশের ক্লান্তিলগ্নে প্রবাসীরা ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু এই প্রবাসীরা অধিকার থেকে বঞ্চিত। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান প্রবাসীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন। প্রবাসীদের কথা শুনুন,তাদের সমস্যা গুলো সমাধান করুন। বিভিন্ন সময় দেশ থেকে বিতাড়িত ,আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রোষানলের শিকার সাংবাদিক,লেখক,এক্টিভিটিস্ট,তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে যথাযথ সম্মান দিতে হবে। নুরুল হক নুর পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে সেলুট জানান, আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকার জন্য।ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যারা ছাত্র জনতা যারা আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছিলেন তাদেরও ধন্যবাদ জানান। আগামীকাল ২১ আগষ্ট সকাল ১১ টায় গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সমনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন নুরুল হক নুর। দেশের মানুষকে রাজপথে নামার আহ্বানও জানান নুর।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব গণহত্যার দায়ে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করা। আওয়ামীলীগের নিবন্ধন থাকলে তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে গণহত্যার পরে কোন দল বা সংগঠনের রাজনৈতিক অস্তিত্ব থাকার নজির নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও বলবো, দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামীলীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ করুন। এটি না করলে জনগণের আস্থা হারাবেন। গত ১৫ আগস্ট প্রতিবিপ্লবের চক্রান্ত হয়েছিলো। জনগণ সেটি রুখে দিয়েছে। ২১ আগস্টও সেই ষড়যন্ত্র চলছে। আগামীকাল জনগণ রাজপথে থাকবে। বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেওয়া হবে। সময়টিভির নাম, লগো, মালিকানা ও ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন করতে হবে, তাদের সম্প্রচার বন্দের প্রয়োজন নেই। সম্প্রচার বন্ধ করলে অসংখ্য সাংবাদিক, কর্মচারী বেকার হয়ে পড়বে। আমরা গণমাধ্যমকে নতুন করে ঢেলে সাজাবো। গণমাধ্যমে কোন দালালি, চাটুকারিতা চলবেনা। গণমাধ্যমের শতভাগ স্বাধীনতা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। ভারতকে বলবো, আপনারা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিন। আমরা চাই, আপনারা আওয়ামী ফ্যাস্টিস্টকে একতরফাভাবে সাপোর্ট করার জন্য অনুতপ্ত হবেন, দুঃখপ্রকাশ করে জনগণের সাঘে সম্পর্ক উন্নয়নের ঘোষণা দিবেন। ভবিষ্যতে আর কখনোই বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে নাক গলাবেন না। প্রবাসীরা দেশের রত্ন। তাদের ভোটাধিকার ও দ্বৈত নাগরিকত্বের দাবি যৌক্তিক। অবশ্যই এটির বাস্তবায়ন করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কবীর হোসেন বলেন,
ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের সংহতি জানিয়ে সারাবিশ্বে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স শাটডাউন সহ রাজপথে ও বাংলাদেশী দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে। আন্দলোনে সংহতি জানানোর কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫৪ জন প্রবাসীসহ অন্যান্য দেশে আটককৃত সকল প্রবাসীদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রবাসী সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান(দূতাবাস, পাসপোর্ট অফিস, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিমান অফিস, বিএমইটি, অন্যান্য) এর সকল দূর্নীতিবাজ রাষ্ট্রদূত, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ করে সৎ ও মেধাবী ও প্রবাসবান্ধব রাষ্ট্রদূত, কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে।

সর্বশেষ তিনি প্রবাসীদের যৌক্তিক ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট।

১০ দফা

১/ অনিয়মিত, আনডকুমেন্টেড, দুস্থ এবং অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীর মরদেহ পরিবহন ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২২ দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।

২/ প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার চাই।

৩/ বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি বন্ধ ও যথাযথ সম্মান চাই।

৪/ প্রবাসীদের জন্য যুগপোযোগী দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন ও পেনশন সুবিধা চাই।

৫/ সহজ প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট সংশোধনের সুযোগসহ দালাল ও হয়রানি মুক্ত পাসপোর্ট ও দূতাবাস সেবা চাই।

৬/ প্রবাসী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চাই।

৭/ জাতীয় বাজেটে প্রবাসীদের জন্য (৫%) বিশেষ বরাদ্দ চাই।

৮/ বিদেশে কাগজপত্র বিহীন প্রবাসীদের বৈধকরণ ও আটককৃতদের মুক্তির জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।

৯/ বিদেশে প্রবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত বাংলাদেশী দূতাবাস ও শ্রম কল্যাণ উইং চাই।

১০/ অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ও প্রবাস ফেরতদের কর্মসংস্থান, সুদমুক্ত পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা চাই।

জাপান প্রবাসী আরিফ হোসেন অর্ক বলেন, জাপান দূতাবাসে জাপানের অফিস টাইমে ১০-১৮ টা সকল প্রবাসীদেরক সেবা প্রদান করতে হবে। পাসপোর্ট সেবা দ্রুত সময়ের মধ্যে দিতে হবে। জাপান থেকে সরকারি খরচে লাশ দেশে আনতে হবে।

আইয়ুব আল আনসারী- সম্পাদক,প্রবাসী অধিকার পরিষদের প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান সহ-সম্পাদক আইয়ুব আল আনসারীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন,গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন,মাহফুজুর রহমান,মানবাধিকার কর্মী শামসুল আলম লিট, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম শাকিল, উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন,জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মিমজাল মুফতি, মানব পাচার প্রতিরোধ ও পুনর্বাসন সম্পাদক শিহাব উদ্দিন প্রমুখ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button