জাতীয়

প্রকৌশলী মিনহাজ হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী

মুক্তমন ডেক্সঃ রাজধানী যাত্রাবাড়ীর প্রকৌশলী মিনহাজুর রহমান হত্যাকারী কিশোরগ্যাং লিডার কিং মাহফুজসহ সকল খুনীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত দনিয়া কলেজের সামনে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে এ মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করা হয়।
এসময় সায়েদাবাদ থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কাচপুর পর্যন্ত দুইপাশে ৩ ঘন্টা যানচলাচল বন্ধ থাকে। এতে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পরে যাত্রীরা। পরে ডিএমপির ওয়ারি জোনের ডিসি হারুন অর রশিদ এসে ৭২ ঘন্টার মধ্যে আসামীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে মহাসড়ক ছেড়ে দেয় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দনিয়া কলেজের সামনে কিশোরগ্যাং লিডার মাহফুজ ওরফে কিং মাহফুজের নেতৃত্বে ১০-১৫জন কিশোরগ্যাং অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে প্রকৌশলী মিনহাজুর রহমানকে চাইনিজ কুড়াল,রামদা,চাপাতি দিয়ে এলোপাতারী কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের বড়ভাই বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেছে। ৩দিনেও কোন আসামী গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

বুধবার বিকেলে দনিয়া কলেজ প্রাঙ্গণে জানাযা দিয়ে তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর গ্রামে দ্বিতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

মিনহাজ বেসরকারি একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে লেখাপড়া শেষ করে সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি করছিলেন। কদমতলীর সাদ্দাম মার্কেটের তুষারধারা এলাকায় পরিবারের সাথে বসবাস করতেন। তার বাবা হাফেজ কারী মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে ছোট ছিলেন মিনহাজ। তিনি বিবাহিত, তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা বলে জানা গেছে।

মামলা সুত্রে,স্বজন ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাযায়, মিনহাজ বিএনপির ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মিনহাজ। সন্ত্রাস,চাঁদাবাজি, মাদকসহ কোন অন্যায়ের সাথে আপোষ করতেন না। তার এ ভুমিকার জন্য দনিয়া কলেজের সামনেসহ দনিয়া, নুরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অপরাধিরা মাথাচড়া দিতে পারেনা। বিশেষ করে দনিয়া পাটেরবাগের এলাকার কিশোরগ্যাং লিডার কিং মাহফুজের বিভিন্ন অপরাধমুলক কাজে বাধা দেয়ায় একাধিকবার বাকবিতন্ডা ঘটে। কয়েকদিন পূর্বে দনিয়া কলেজে বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে মিনহাজের সাথে কিং মাহফুজের বাকবিতন্ডা হয়।

ঘটনার দিন বিকেলে দনিয়া কলেজের সামনে সাকরাইনের অনুষ্ঠানের টাকা দিতে আসেন মিনহাজ। দনিয়া কলেজের সামনে মিনহাজ তার বন্ধু আহাদ আসলামের সাথে বসেছিল । এসময় মাহফুজের নেতৃত্বে ১০/১৫জন মিনহাজকে দনিয়া কলেজের প্রথম গেটের দেয়ালের সাথে হাত-পা চেপে ধরে চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি ও ছুরি দিয়ে উপর্যুপুরী তাকে কোপাতে থাকে। এসময় আহাদ মিনহাজকে বাচাঁতে গেলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে আহত করে। ঘাতকরা শতশত মানুষের সামনে মিনহাজকে কোপানোর সময় কেউ এগিয়ে যায়নি। এসময় মিনহাজ ঘাতকদেরকে বলেন কিরে তোরাকি আমারে বাঁচতে দিতিনা,আমারে কি তোরা মাইরাফালাবি। এরপরও ঘাতকরা মিনহাজকে কোপানো বন্ধ করেনি। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে তাকে ফেলে চলে যায়।

নিহতের ভগ্নীপতি খালিদ মাহফুজ বলেন, পূর্ব বিরোধের জের ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে মাহফুজসহ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীরা মিনহাজকে এলোপাতারি ছুরিকাঘাত করে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়লে তারা চলে যায়। পরে খবর পেয়ে মিনহাজকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button