ক্লিকব্যাইট! এই জোয়ারে গা ভাসাতে কেউ আর একরত্তি ছাড় দিচ্ছে না!
আরিফুল ইসলাম রনি :
অনেক ল ড়াই করে বেড়ে উঠেছেন নেহা কাক্কার। একটা সময় বাবা-মা, ভাই-বোনসহ সবাইকে থাকতে হয়েছে স্রেফ একটি রুমেই। সেই নিউজের ফটোকার্ড দেখুন বাঁ পাশে…
‘এক রুমে ৫ জনের সঙ্গে ছিলেন নেহা’- কথাটায় ভুল নেই। কিন্তু সেখানে কী মিশে আছে, তারা কী বোঝাতে চেয়েছে, আপনিও জানেন…
দিনের পর দিন এই ধরনের চর্চা চলে আসছে আমাদের গণমাধ্যমে। এরকম চলে আসছে বলেই ডান পাশে ফটোকার্ডের জন্ম হয়েছে। মিসলিডিং ছবি ও হেডিংয়ের সেই ফটোকার্ড দাবানলের মতো ছড়িয়ে গেছে…
এই চর্চা নিত্যই হচ্ছে। আমরা যাদেরকে মূলধারার গণমাধ্যম বলি, তাদের সোশাল হ্যান্ডেলে, তাদের অনলাইনে কিংবা অনেক সময় মূল মাধ্যমেও নিয়মিতই হেডিং বা খবর টুইস্ট করা হয়, রঙচঙ মাখিয়ে ফটোকার্ড করা হয়, ‘পাবলিক খাওয়ানোর’ উপকরণ উপস্থাপন করা হয়…
বেশির ভাগ সময়ই হয়তো ‘নিরীহ’ কিছু নিয়ে এরকম হেডিং বা ফটোকার্ড হয়, সেখানে সরাসরি আপনার-আমার ব্যাপার বা জনস্বার্থ-দেশের স্বার্থের মতো ব্যাপার বেশির ভাগ সময়ই থাকে না। ‘সহজ শিকার’ টার্গেট করে এসব করা হয় ক্লিক-হিট-ভাইরাল হওয়ার জন্য। কিন্তু এসব করতে করতেই নানারকম স্প র্শকাতর ব্যাপার নিয়েও ভুল উপস্থাপনা হয়ে যায়। কিংবা করা হয়, ইচ্ছে করেই। ওই যে, ‘নিরীহ’ ব্যাপার নিয়ে করতে করতে সবকিছুকেই জায়েজ মনে হয়…!
অথচ, ছোট-বড় কোনো ব্যাপারই ‘টুইস্ট’ করার ব্যাপার সাংবাদিকতায় থাকা উচিত নয়…
সচেতনভাবেই এসবকে বুড়ো আঙুল দেখালে কিছু করার নেই…
যাহোক, কালকে থেকে অনেক চর্চিত ইস্যু নিয়ে আমার জানাশোনাটুকু বলি। মোহামেডান ও প্রাইম ব্যাংক মাঠে গিয়ে যখন দেখেছে আম্পায়ার হিসেবে আছেন সাথিরা জাকির জেসি, দুই দলের ম্যানেজার সেটা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সংশ্লিষ্ট দু-একজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে তারা প্রশ্ন করেছেন বা ‘কনসার্ন’ জানিয়েছেন। জেসি ‘নারী’ বলে সেটা হতে পারে, জেসি ‘অনভিজ্ঞ’ বলেও সেটা হতে পারে। যেটাই হোক, তারা প্রশ্ন করেছেন। তবে ‘আপত্তি’ বা ‘অনীহা’ অনেক বড় শব্দ এখানে। জেসির পরিচালনায় তারা খেলতে চান না বা খেলতে রাজি নন, এই ধরনের কিছু বলেননি…
জানিয়ে রাখা ভালো, মৌখিক বা লিখিত, কোনোরকম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়নি…
তাদের তাৎক্ষণিক ‘প্রশ্ন বা কনসার্ন’, কোনোটাই কি গ্রহণযোগ্য? না, কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা গ্রহণ করাও হয়নি। খেলা সময়মতোই শুরু হয়েছে…
সেই প্রশ্ন বা কনসার্নের প্রক্রিয়ায় কোনো ক্রিকেটার কি সম্পৃক্ত ছিলেন? মোটেও না। সংশ্লিষ্ট অনেক অনেকের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু জেনেছি, ক্রিকেটারদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না…
ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে মুশফিকের আউট নিয়ে বিতর্কে খেলা বন্ধ ছিল ১৩ মিনিটের মতো। সেই আউটে আম্পায়ারদের দায় ছিল না এবং ক্রিকেটাররা আম্পায়ারকে কোনো দায় দেননি…
যদি ‘আপত্তি’ বা ‘অনীহা’ কিংবা এই সংক্রান্ত কিছুতে একজন ক্রিকেটারের সম্পৃক্ততার সামান্যতম প্রমাণও পেতাম, তাহলে অবশ্যই এবং অবশ্যই সোচ্চার হতাম। তানজিম সাকিবের ইস্যুতে বিন্দুমাত্র ছাড় দেইনি, এখানেও দিতাম না। কিন্তু আমি অন্তত বিন্দুমাত্র প্রমাণ বা ইঙ্গিতও পাইনি…
এরকম স্পর্শকাতর অভিযোগ কারও বিরুদ্ধে করতে হলে তো ন্যূনতম ভিত্তি লাগবে! সেটা আমি পাইনি…
এই চর্চাও অবশ্য আমাদের গণমাধ্যমে খুব চলে এখন। স্প র্শকাতর বা ভ য়া ন ক সব খবরও ‘সূত্রের বরাত’ দিয়ে অবলীয়লায় লেখা বা বলা হয়। হ্যাঁ, ‘সূত্র’ দিয়ে অনেক সময় নিউজ করতে হয় বটে। কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ বা স্প র্শকাতর নিউজ কি সূত্রের বরাত দিয়ে বা ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ কারও কোট দিয়ে করা উচিত? কেউ মতামত লিখলে বা মন্তব্য প্রতিবেদন লিখলে কিংবা সামাজিক মাধ্যমে লিখলে-বললে, দায় তার নিজের। সেটা আলাদা কথা। কিন্তু গণমাধ্যমে বা গণমাধ্যমের সোশাল হ্যান্ডেলে সেসব করার সুযোগ কি আছে? অথচ এগুলো আমরা হরহামেশাই দেখছি এখানে…
যাহোক, নারী আম্পায়ার বি তর্কে ক্রিকেটারদেরকে যারা জড়িয়েছেন, তারা নিজেরাই ভালো করে জানেন যে ইচ্ছে করেই এসব করেছেন। আউট নিয়ে বিতর্কের ঘটনার ছবির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে নারী আম্পায়ারের পরিচালনায় খেলতে না চাওয়ার খবর…
‘ক্রিকেটারদের আ পত্তি ছিল’ বা ‘অমুক-তমুক ক্রিকেটারের দলের আ পত্তি ছিল’—এসব হেডিং-ফটোকার্ডের পক্ষে ফাঁক-ফোকড় দিয়ে যুক্তি দাঁড় করানো যাবে। যেরকম নেহা কাক্কার ৫ জনের সঙ্গে এক রুমে ছিলেন, এটার পক্ষেও যুক্তি দেখানো যাবে। কিন্তু দুটির উদ্দেশ্য একই, সেটা তারাও জানে, আমরাও…
এই খবর ছড়ানোয় বা ক্ষো ভ প্রকাশ করায় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের দায় খুব একটা নেই। কিন্তু তারা যখন জেনেছেন যে নিউজটা বিভ্রান্তিকর ছিল, তখনও নানা যুক্তি দেখিয়ে সেটাকেই আঁকড়ে ধরে রাখা জরুরি নয়। স্রেফ বলে দিলেই হয়, সংবাদমাধ্যম ভুল খবর প্রকাশ করেছিল বা ভুলভাবে উপস্থাপন করেছিল…
(সবই আমার কথা, আমার ভাবনা, আমার পর্যবেক্ষণ। আপনার বিশ্বাস করা বা একমত হওয়া জরুরি নয়)
লেখক : স্পোর্টস এডিটর, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। (লেখাটি ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া।)