ছাত্রলীগ আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল, বানোয়াট মামলা দেয় কুয়েট প্রশাসন

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনাঃ ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা আমার ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছিল। তারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আমার শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ থানায় নিতে রাজি হয়নি। পরে কুয়েট প্রশাসন অ্যাম্বুলেন্সে করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গণপিটুনিতে আহত দেখিয়ে ভর্তি করে। ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার উল্লেখ করেনি। পরে বানোয়াট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আমার বিরুদ্ধে মামলা দেয়।
এভাবেই ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিজের ওপর ঘটে যাওয়া বর্বরোচিত ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিচ্ছিলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসসি বিভাগের ’১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জাহিদুর রহমান।
মঙ্গলবার বিকেলে কুয়েটের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন তিনি। জাস্টিস ফর কুয়েটিয়ানস এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি পেশ করা হয়।
দাবিগুলো হলো যে সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা জাহিদুরের নির্যাতনের সাথে জড়িত তাদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জাহিদুর ব্যতীত অন্যান্য যেসকল শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহিদুরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মামলার জন্য আইনি সহায়তাসহ লজিস্টিক সাপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দিতে হবে এবং সেটার লিখিত আশ্বাস দিতে হবে।
জাহিদুর বলেন, ওইদিন বিকেল ৫টার পর থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে তৎকালীন রশিদ হল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। পরবর্তীতে পুলিশ এসে আমাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করতে না চাইলেও জোর করে আমাকে বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে মামলা নেওয়ার জন্য পুলিশকে চাপ দেয় হল প্রশাসন, কুয়েট প্রশাসন ও ছাত্রলীগ। আমার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল বিধায় পুলিশ কোন ঝুঁকি নিয়ে আমাকে থানায় নিতে অস্বীকার করে। কুয়েট প্রশাসন আমাকে কুয়েটের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজের প্রিজন সেলে ভর্তি করে দিয়ে আসে গণপিটুনিতে আহত বলে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা উল্লেখ করেনি।
এরপর ১২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন কুয়েট প্রশাসন এ ঘটনার কোন তদন্ত না করে খানজাহানআলী থানায় ডিজিটাল ডিভাইস দ্বারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখ হাসিনার নামে মিথ্যা আক্রমণাত্মক তথ্য প্রকাশ করে কুয়েট ছাত্রদের মধ্যে অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটনার উপক্রম করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫/২৯/৩১ ধারায় সাজানো বানোয়াট ও মিথ্যা মামলা দেয়। আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকলেও চিকিৎসার সুযোগ না দিয়েই ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে আমাকে কোর্টের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। দুই পায়ে আঘাতের ব্যথা বেশি থাকায় পায়ে ভর করে হাঁটতে পারতাম না। এই পরিস্থিতিতে স্ক্রাচে ভর করে ৫১ দিন হাজত খাটা লাগে। ২ নভেম্বর ২০২২ সালে আমার জামিন হয়।
জামিনের পাওয়ার ক্যাম্পাসে ফিরলেও কুয়েট প্রশাসনের কাছে ক্যাম্পাসে আমার নিরাপত্তা চাইলেও তারা নিরাপত্তা দিতে পারবে না বলে অস্বীকার করে। এবং পরবর্তীতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হুমকি ও হামলার ভয়ে আমি কুয়েট ছেড়ে চলে যায়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর ১০ আগস্ট কুয়েটে আবার ফেরত আসি।
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আমার সাথে ঘটে যাওয়া এই জুলুমের অভিযুক্তদের নামে কুয়েট প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হয় এবং জাস্টিস ফর কুয়েটিয়ানস এই শিরোনামে মানববন্ধন করে।
সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কুয়েট প্রশাসন ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী গত ২৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ১০ জনকে কুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং ৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।