পুলিশি বাধায় গণঅধিকার পরিষদের কফিন মিছিল পন্ড

মুক্তমন রিপোর্ট : ভোটাধিকার হরণ ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের প্রতিবাদে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশ ও কফিন মিছিল ছিলো গণঅধিকার পরিষদের। আজ শনিবার সকাল ১১:৩০ টায় বিজয়নগর পানিরট্যাংকির মোড়ে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ শেষে কফিন মিছিল করতে পুলিশ মারমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। কফিন মিছিল বন্ধ না করলে গণঅধিকার পরিষদ এর সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁনের সাথে মিডিয়ার সামনে প্রকাশ্যে দুর্ব্যবহার করে পুলিশ এবং কয়েকদফা ধাক্কা দিয়ে আটকের হুমকি দেয়। এবং নেতৃবৃন্দের সাথে ধস্তাধস্তি করে কফিন মিছিল লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলে। পুলিশি বাধা, মারমুখী ভূমিকা ও ধস্তাধস্তিতে শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ অনেকে নীচে পড়ে গিয়ে আহত হয়।
মিছিল শুরু হওয়ার পূর্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সসভাপতি নুরুলহক নুর বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ৬০% ভোট কেটে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের প্রতিবাদে আজকে আমাদের এই কফিন মিছিল। গণতন্ত্র এখন কফিনে ,আমরা গণতন্ত্রের পুর্নজাগরণ করতে চাই। মারামারি,হানিহানি,হত্যার রাজনীতির অবসান চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে চাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। ২১ আগস্টের মতো গ্রেনেড হামলার মতো ভয় থাকলে আমরা কথা দিচ্ছি আপনার পাশে থাকবো। আমরা তো বলছি প্রয়োজনে ২/১ বছরের জন্য জাতীয় সরকার হোক। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। ভারতীয় মদদে একতরফা নির্বাচন করে দেশ ধ্বংস করবেন না। ৭ জানুয়ারি ফেলানি হত্যা দিবসে কেন ভোটের তারিখ ঠিক করা হলো? কারণ ভারত আওয়ামীলীগকে ব্যবহার করে ফেলানি হত্যাসহ সকল সীমান্ত হত্যার ঘটনা ভুলিয়ে দিতে চায়। তাই ভারতের প্রেসক্রিপশনে ৭ তারিখ নির্বাচনের তারিখ ঠিক করছে। টাকা-পয়সা দিয়ে অনেককে নির্বাচনে প্রচারণা-গণসংযোগ করাচ্ছে। তাই জনগণকে আমাদের সতর্ক ও সচেতন করতে হবে। এক-দেড় কিংবা ৫ হাজার টাকার জন্য দেশের ক্ষতি করা যাবে না। গতকাল দেখেছেন বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ নাথ ও দলীয় প্রার্থী শাম্মী আক্তারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছে। ওরা এমপি,মন্ত্রী হতে ক্ষমতায় থাকতে লাশের রাজনীতি করছে। তাই আমরা সকলকে ৭ তারিখের ভোট বর্জন করার আহ্বান জানাচ্ছি।
কফিন মিছিলে পুলিশি বাধা ও কফিন ভাংচুরের পর নুরুলহক নুর বলেন, আপনারা দেখেছেন আমরা দুই-আড়াইশো লোক শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করতে চেয়েছিলাম। সেখানে পুলিশ বাধা দিয়েছে ,গুন্ডা-মাস্তানদের মতো লাথি দিয়ে আমাদের কফিনটি ভেঙে ফেললো। এটি কি পুলিশ করতে পারে? কোন আইনে তারা এসব করতে পারে? আমাদের চেয়ে পুলিশের সংখ্যা বেশী ,তাদের অনেকের হাতে ইলেকট্রিক শক লাঠি, টিপ ছুরির মত জিনিস ছিলো। ভিড়ের মাঝে কাউকে ছুড়িকাঘাত করা বা পুলিশেরই কোন সদস্যকে ছুড়িকাঘাত করে আমাদের উপর দায় চাপাতো। যেভাবে ২৮ অক্টোবর ছাত্রলীগ,যুবলীগকে দিয়ে পুলিশ হত্যা করে মির্জা ফখরুলদের আসাসি করেছে।
দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খান বলেন,নির্বাচনী আমেজ তৈরি করতে ক্রিকেটার, নায়ক-নায়িকা-গায়িকাদের আওয়ামীলীগ প্রার্থী করেছে। তাদের মাধ্যমে জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু সাধারণ জনগণ বলছে, তারা ভোটকেন্দ্রে যাবেনা, আওয়ামীলীগকে ভোট দিবেনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভুলভ্রান্তিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য। তার মানে কি তিনি ১৪, ১৮ সালের ভুল স্বীকার করে নিলেন? ২৪ সালে আরেকটা ভুল করতে যাচ্ছেন, সেটিও স্বীকার করলেন? আমরা তার প্রতি আহ্বান রাখতে চাই, আপনি সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের উদ্যোগ নিন। এখনো সময় আছে, একতরফা নির্বাচন থেকে ফিরে আসুন। এটি আওয়ামীলীগ ও দেশের জন্য কল্যাণ হবে।
অন্যথায় যতোই মনে করা হোক, আমেরিকা চুপ আছে, তাদের আসলে যা বলার বলে দিয়েছে যে, সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন করুন। যেহেতু করেননি, নির্বাচনের পর অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আসলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দুর্ভিক্ষে সাধারণ মানুষ না খেয়ে মরবে। ভূমিমন্ত্রীর লুটপাটের চিত্র দেখেছেন, ২৬০ টি বাড়ি করেছেম লন্ডনে, যার মূল্য ২৫০০ কোটি টাকা। আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা, এমপি – মন্ত্রীদের সম্পদ ১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০০,৪০০ % বেড়েছে এমনকি কারও কারও ২০০০% পর্যন্ত বেড়েছে। অনেকে হলফনামায় সম্পদের তথ্য লুকিয়েছে। এভাবেই তারা লুটপাট করেছে। এবারও তারা লুটপাট করতেই একতরফা নির্বাচনের পথে হাটছে।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিল উজ্জামানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ,আব্দুজ জাহের,সিনি.যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন,ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান,শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সম্পদ,গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম শাকিল, ছাত্র নেতা সম্রাট, যুবনেতা সবুজ প্রমুখ।